১৪-১১-২০১৯ ইং
মেঘালয় ক্যাম্পিংয়ে যাওয়ার আগে থেকেই আমাদের এই ক্যাম্পিং প্ল্যান করা হয়েছিল। এই ক্যাম্পিং এর মূল আয়োজক ছিল Asaduzzaman মামা।এবারে ক্যাম্পিংয়ে মোট মেম্বার ছিল 24 জন ,20 জন ছিল ফেনী থেকে এবং বাকি চারজন চট্টগ্রাম থেকে।
এবারের ক্যাম্পিংয়ে আমার ভ্রমণ লাইফের সব থেকে কাছের দুজন বড় ভাই ছিল। তাদের সাথে যখন এই ক্যাম্পিং এর ব্যাপারে কথা বলি সাথে সাথে তারা দুজন রাজি হয়ে যায়। ভাগিনা রনি টাইমলাইনে পোষ্ট দেখে ইনবক্সে জানায় সেও আমাদের সাথে যাবে। সবাইকে বলে দেওয়া হল বৃহস্পতিবার বিকাল 5 টায় আমাদের রিপোর্টিং টাইম। অফিস থেকে 5 টায় ছুটি নিয়ে রওনা হই ক্যাম্পিং এর জন্য। রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম থাকার ফলে কেউই সঠিক সময় রিপোর্টিং স্থানে পৌঁছাতে পারেনি যার কারণে আমাদের রওনা হতে একটু দেরী হয়ে যায়।
সবাই একে খান মোড় একত্রিত হয়ে রওনা হই ছোট দারোগার হাট। ছোট দারোগাহাট নেমে কিছু কেনাকাটা বাকি ছিল সে সব শেষ করে সিএনজি নিয়ে রওনা দেই হরিণমারা লেকের দিকে। আমাদের এই ক্যাম্পিং আয়োজন করা হয়েছিল হরিণমারা লেকের পারে।
পূর্ণ চাঁদের আলো নিয়ে গ্রামের পথ ধরে ছুটে চলছে আমাদের গাড়ি। চারপাশ নিশ্চুপ কোথাও কোন আওয়াজ নেই চাঁদের আলোতে খুব স্পষ্টভাবেই দূরের ঐ পাহাড় গুলো বুঝা যাচ্ছে। ক্যাম্পিং স্থানে পৌছাতে পৌছাতে রাত দশটা বেজে যায়, ততক্ষনে বাকি মেম্বাররা বারবিকিউ এর আয়োজন শুরু করে দিয়েছে। ক্যাম্পিং এ পৌঁছে সকলের সাথে কুশল বিনিময় করে শুরু হল আড্ডা।
শহর থেকে যাওয়ার সময় যতটা শীত হবে বলে মনে করেছিলাম ততটা শীত হয়নি। লেকের গা ঘেঁষে বাদের নিচে স্থাপন করলাম আমাদের তাবু। তাঁবুর ভেতর থেকে লেকের দৃশ্যটা ছিল অসাধারণ পূর্ণ চাঁদের আলো যখন লেকের পানিতে পড়ছে মুহূর্তে মনে হয়েছিল এইতো চাঁদ মামা বুঝি আমাদের কাছে চলে এসেছে। সত্যি চাঁদের আলোর যে ছায়াটা লেকের পানিতে পেয়েছিলাম সত্যিই অসাধারণ ছিল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সবার কাছে নিয়ে আসা হল গরম গরম পরোটা আর চিকেন বারবিকিউ। সারি ভাবে বসে লেকের পাড়ে পূর্ণ চাঁদের আলোয় খাবারটা ছিল খুবই সুস্বাদু। খাবার শেষ করে যে যার মতো করে আড্ডা দিচ্ছে।আমি নাঈম ভাই ,ইমন ভাই ,রনি ও আসাদ মামা রাত দুটো অবধি আড্ডা দিয়ে তাবুতে চলে গেলাম ঘুমের জন্য।
সূর্যমামা আলোকে ঘুম ভেঙে যায় সকাল 6:30। তাবু খুলে বাইরে এসে দেখি লেকের পানিতে হালকা কুয়াশার আস্তরণ বিস্তার করছে।লেকের ওপারে পাহাড়ের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসছে সূর্যমামা। রাতে এমনভাবে তাঁবুগুলো স্থাপন করা হয়েছিল সকালের আলোতে তাঁবুর ভেতর থেকে মনে হচ্ছিল তাঁবুগুলো লেকের ভিতরে। ফজরের নামাজ পড়ে সবাই শুরু করে দিল ফটো সেশন।
কিছুক্ষণ পরেই নিয়ে আসা হল সকলের জন্য সকালে নাস্তা। নাস্তা শেষ করে সবাই রওনা হলাম হরিণমারা ঝর্ণা দেখতে। লেকের ওপারে রয়েছে ঝর্ণা, কিন্তু আমাদেরকে যেতে হবে কয়েকটা পাহাড় পেরিয়ে। 30 মিনিট হাঁটার পর পেয়ে গেলাম কাঙ্ক্ষিত সেই ঝর্ণা। তবে বেশি পানি না পাওয়ায় দু-একজন বাদে কেউই গোসল করেনি সেখানে। হরিনমারাতে নাকি মোট তিনটি ঝর্ণা রয়েছে কিন্তু আমরা গিয়েছি দুটিতে। ঝর্নার পানিতে যারাই নেমেছিল তাদের ভিতর থেকে কয়েকজনকে জোঁকে ধরেছিল ? আমিও পানিতে নেমে ছিলাম কিন্তু ভাগ্য ভালো থাকায় তাদের ছোঁয়া পাইনি ???
দুটো ঝর্ণা ঘুরে সবাই ক্যাম্পের দিকে আবার রওনা হলাম।আসার সময় আমরা তিনজন পিছিয়ে পড়ে ছিলাম যার কারণে এসে দেখি আমাদের কে বাদ দিয়ে সকলেই লেকের পানিতে গোসল শুরু করে দিয়েছে ?
আমরা আসার পরেও আমাদের সাথে অনেক জন জয়েন করেছিল।30 মিনিট লেকের পানিতে সাতার কেটে সকলে প্রস্তুতি নিলাম যার যার বাড়িতে যাওয়ার জন্য। সবকিছু গুছিয়ে গ্রামের আঁকাবাঁকা পথ ধরে রওনা হলাম মেইন রোডের দিকে। সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম চট্টগ্রাম।গাড়ি থেকে নেমে জুমার নামাজ আদায় করে আলহামদুলিল্লাহ সুস্থভাবে বাসায় পৌছাই।
আলহামদুলিল্লাহ অনেক সুন্দর একটি রাত পার করেছি হরিণমারা লেকের পাড়ে। টিমের প্রত্যেকটা মেম্বার ছিল খুবই ভালো।
সর্বশেষ ধন্যবাদ দিতে চাই আসাদ মামাকে, এত সুন্দর একটি ক্যাম্পিং এর আয়োজন করার জন্য ???
যেভাবে যাবেন: বাংলাদেশের যেকোন জায়গা থেকে প্রথমে আসতে হবে মিরসরাই ছোট দারোগা হাট বাজার। বাজার থেকে সিএনজি নিয়ে হরিণমারা লেক।
বর্তমানে হরিণমারা লেকের পাড় এবং আশেপাশের জায়গা গুলো পরিষ্কার রয়েছে যদি কেউ সেখানে ক্যাম্পিং করতে যান প্লিজ সাথে নিয়ে যাওয়া বোতল পলিথিন ও খাবারের ময়লা ফেলে আসবেন না, আসার সময় সাথে করে নিয়ে এসে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলবেন।
চলুন দেখে নেওয়া যাক কিছু মোবাইল ফটোগ্রাফি:
আরো ছবি: