কুমিল্লাতে ধর্মসাগর পাড়ে গিয়ে আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। একটি জলধারকে ঘিরে চমৎকার একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেটা যে কাউকেই মুগ্ধ করবে।
ধর্মসাগর বাংলাদেশের কুমিল্লা শহরে অবস্থিত একটি বিশাল জলাধার। এটি একটি প্রাচীন দীঘি। মানুষের দেহে ৭০ ভাগ পানি তাই হয়তো পানি আমাদের একটু বেশিই কাছে টানে। মন খারাপ হলে কোনো সমুদ্র পাড়ে, নদীর পাড়ে বা জলধারের পাড়ে বসে সময় কাটালে মন খারাপ পানিতে মিশে যায়।
ত্রিপুরার অধিপতি মহারাজা প্রথম ধর্মমাণিক্য ১৪৫৮ সালে ধর্মসাগর খনন করেন। এই অঞ্চলের মানুষের জলের কষ্ট নিবারণ করাই ছিল রাজার মূল উদ্দেশ্য। রাজমালা গ্রন্থ যেখানে ত্রিপুরা ও তার রাজবংশের ইতিহাস লেখা হয়েছে সেটা আনুসারে মহারাজা ধর্মমাণিক্য ১৪৩১ খ্রিঃ থেকে ১৪৬২ খ্রিঃ পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৩২ বৎসর রাজত্ব করেন। মহারাজা ধর্মমাণিক্যের নামানুসারে এর নাম রাখা হয় ধর্মসাগর। ধর্মসাগর নিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে বহু উপাখ্যান ও উপকথা।
বর্তমানে ধর্মসাগরের আয়তন ২৩:১৮ একর। এটির পূর্বে কুমিল্লা স্টেডিয়াম ও কুমিল্লা জিলা স্কুল, উত্তরাংশে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যান ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় অবস্থিত এবং উত্তর কোণে রয়েছে রাণীর কুঠির, পৌরপার্ক।
কুমিল্লার এই ধর্মসাগর পাড়ে আপনি বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারবেন আর সাথে জলাধারে পা ডুবিয়ে আড্ডা দিতে পারবেন, মন খারাপ দূর করতে পারবেন। এছাড়াও বোটের মাধ্যমে আপনি জলাধারে ভ্রমণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে একবার ভ্রমণে আপনাকে জনপ্রতি মাত্র ৩০ টাকা গুনতে হবে।
এছাড়াও সেখানে জলধারার বিপরীতে রয়েছে একটি লাইব্রেরি। চাইলে সেখান থেকে বই কিনে পাড়ে বসে পড়তে পারেন। আর সেখানে সকালবেলা এবং বিকালবেলায় হাঁটাহাঁটি করে মন স্ফূর্ত রাখতে পারেন। দীঘির পাড়ের সবুজ বড় বড় গাছের সারি ধর্মসাগরকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। তাছাড়াও শীতকালে ধর্মসাগরে প্রচুর অতিথি পাখির আগমন ঘটে।
শুধু হাঁটা, প্রকৃতি উপভোগ করা আর বই পড়া ছাড়াও আপনি সেখান থেকে ফুচকাসহ বিভিন্ন খাবার ক্রয় করে খেতে পারবেন। এজন্য বেশ কিছু ফাস্ট ফুডের দোকানও রয়েছে।
যেভাবে যাবেন: বাংলাদেশের যেকোনো স্থান থেকে কুমিল্লার পদুয়া বিশ্বরোডে নেমে সেখান থেকে কান্দিরপাড়ে চলে যাবেন। কান্দিরপাড়েই রয়েছে ধর্মসাগর পাড়।
যে যে স্থান দেখতে পারেন: কান্দিরপাড়ে ধর্মসাগর পাড় ছাড়াও রয়েছে রানীর কুঠির, টাউনহল, সিটি পার্ক, টাউনহল খেলার মাঠ, নজরুল ইনষ্টিটিউট কেন্দ্র, নগর শিশু উদ্যান ও সিটি পার্ক।
সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পরিবেশের কথা ভুলে যাবেন না। পরিবেশ নোংরা করবেন না, আবর্জনা যা নিয়ে যাবেন এবং যা পাবেন সাথে করে নিয়ে আসবেন। আপনার ভ্রমণ সুন্দর হোক।








