বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর একটি পার্বত্য জেলা হচ্ছে খাগড়াছড়ি জেলা। নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই জেলা। আমি একটা কাজে সেখানে গিয়েছিলাম এবং সময় পেয়ে ঘুরে ফেললাম জেলাটির যতটুকু ঘুরা যায়। আজকের লেখাটা সেই ঘুরাঘুরি নিয়ে।
খাগড়াছড়ি শহরে প্রবেশ করার পর যেটা দেখতে পেয়েছি সেটা হচ্ছে সুন্দর রাস্তাঘাট। এর কারণ হিসেবে পেয়েছি রাস্তার দুইধারে সুন্দর ডাস্টবিন দেওয়া হয়েছে যাতে সকল ময়লা সেখানে ফেলা হয়।
আপনি যদি খাগড়াছড়ি শুরু থেকে ঘুরতে চান কম সময়ের মধ্যে তাহলে প্রথমে আলুটিলা গুহা দিয়ে শুরু করতে পারেন। পার্কের প্রবেশ ফি জনপ্রতি ৩০টাকা। সেখানে খুব সুন্দর একটি পার্ক করা রয়েছে এবং একটি গুহাও রয়েছে। পার্ক থেকে পাখির চোখে পৃথিবী দেখার স্বাদ নিতে পারবেন। আর গুহার একদিক দিয়ে প্রবেশ করে অন্যদিক দেয় বের হতে পারবেন। গুহার মধ্যে অন্ধকার থাকে। আপনি মোবাইলের ফ্ল্যাশ ব্যবহার করতে পারবেন অথবা সেখান থেকে ২০ টাকা দিয়ে মশাল নিতে পারবেন। সেখানে অনেক ডাস্টবিন রয়েছে তাই ময়লা ডাস্টবিনে ফেলুন। আর সম্ভব হলে কোথাও ময়লা দেখলে সেগুলো নিজ দায়িত্বে ডাস্টবিনে ফেলার চেষ্টা করুন।
আলুটিলা গুহা থেকে আপনি যেতে পারেন অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহারে। সেখানে গৌতম বুদ্ধের অনেক বড় এবং অসাধারণ একটি মূর্তি রয়েছে। মূর্তির গায়েও হাজার খানেক ছোট ছোট মূর্তি রয়েছে। এখানে প্রবেশ করতে কোনো টাকা লাগবে না, তবে সন্ধ্যার সময় সেখানে প্রার্থনা হয় বিধায় তখন প্রবেশ নিষেধ থাকে। এটি যেহেতু একটি পবিত্র স্থান তাই এর পবিত্রতার প্রতি লক্ষ্য রাখবেন। জুতা বাহিরে খুলে প্রবেশ করবেন। নানা অঙ্গ ভঙ্গিমায় সেখানে ছবি তোলা থেকে বিরত থাকুন।
বৌদ্ধ মন্দিরের সামনেই রয়েছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্ক। এখানে প্রবেশ ফি জনপ্রতি ২০টাকা। সেখানে আপনি অনেক সুন্দর একটা পরিবেশ পাবেন। সেখানে একটি লেক আছে যেখানে আপনি নৌকায় চড়তে পারবেন, ঝুলন্ত ব্রীজ আছে, কিডস কর্ণার আছে, সেই সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে৷ এখানেও অনেক ডাস্টবিন রয়েছে তাই ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন।
পার্কের থেকে বের হয়ে যেতে পারেন হেরিটেজ পার্কে। সেখানে দেখার মতো তেমন কিছু না থাকলেও একটা ছোট্ট জায়গায় বাংলাদেশের মানচিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে যেটার চারপাশে পানি রয়েছে। আর পানিতে অনেক শাপলা ফুলও রয়েছে।
আমি প্রথমেই বলেছি আমি একটা কাজে গিয়ে সেখানে সময় বের করে ঘুরেছিলাম৷ ফলে আমি সেই অনুযায়ী যেটা সুবিধা হয়েছে সেটা করে নিয়েছি। আপনি যদি চান এভাবে করতে পারেন এক্ষেত্রে আপনি চট্টগ্রাম থেকে বাসে করে সরাসরি আলুটিলা গেইটের সামনে নামতে পারবেন এবং বাকিগুলো সেখান থেকে লোকাল সিএনজি নিয়ে ঘুরতে পারবেন। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে জনপ্রতি ১৫ থেকে ২০টাকার বেশি লাগে না। আমি যেটা বলেছি সেই অনুযায়ী গেলে আপনি ধীরে ধীরে শহরের দিকে যেতে পারবেন। আর চলে আসার জন্য সেখানেই বাজারে বাস কাউন্টার পাবেন। সেখান থেকে আগে টিকেট করে রাখা ভালো। নাহলে পরে টিকেট না পেলে অসুবিধায় পড়বেন। আপনি যদি শুধু ঘুরার প্ল্যান করতে চান তাহলে আমি আপনাকে হাতির মাথা থেকে শুরু করার পরামর্শ দিব। এক্ষেত্রে আপনাকে খাগড়াছড়ি বাজারে নেমে সেখান থেকে লোকাল অটোরিকশা করে ১০ টাকা ভাড়ায় স্বনির্ভর বাজারে যেতে হবে। ওই খান থেকে আরেকটি অটোরিকশায় হাতির মাথার কথা বললেই হাঁটা পথের সামনে নিয়ে যাবে। সেখানে আপনাকে দেড় ঘণ্টার হাঁটা পথের প্রস্তুতি নিতে হবে। খাগড়াছড়ির পেরাছড়া দিয়ে চেঙ্গী নদী পাড় হয়ে পাক্কা দেড় ঘণ্টার হাঁটা পথ। এক্ষেত্রে আসা-যাওয়ায় সাড়ে তিন ঘণ্টা যাবে, সেখানে কিছু সময় কাটালে ৫ ঘণ্টা লাগবে আবার শহরে ফিরে আসতে। এজন্য আপনি যদি ঢাকা থেকে আসেন তাহলে আপনি একটা বড় সুযোগ পাবেন আরাম করে ঘুরার। কারণ আপনি সকালেই পৌঁছে যাবেন। যেখানে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের প্রথম বাস ছাড়ে সকাল ৭টায়। চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি যেতে শান্তি পরিবহন বা বিআরটিসি বাস ব্যবহার করুন। শান্তি পরিবহনে ভাড়া ১৯০ টাকা এবং বিআরটিসিতে ২০০ টাকা।
আপনি সকাল ৭টার বাসে করে গেলে সকাল ১০টা বা সাড়ে ১০টার মধ্যে পৌঁছে যেতে পারবেন খাগড়াছড়ি শহরে। এর সাথে ৫ ঘন্টা যোগ করলে আপনি হাতির মাথা ঘুরে তিনটার দিকে শহরে থাকবেন। সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে আপনি হেরিটেজে চলে যেতে পারবেন, সেখান থেকে আলুটিলা গুহা এরপর মন্দিরে। সবশেষে আপনি হর্টিকালচার পার্কে যেতে পারেন। তবে দিনের আলোয় হর্টি কালচার যাওয়াটাই ভালো। এক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে হেরিটেজ বাদ দিবেন। সেখানে সন্ধ্যা কাটিয়ে আপনি বাজারে এসে কিছু খেয়ে বাসে চড়ে আপনার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করবেন! চেষ্টা করবেন শেষ বাসের টিকেট করে রাখার। তাহলে আপনাকে তাড়াহুড়ো করতে হবে না। এছাড়াও সব জায়গাতে খাবারের দোকান পাবেন।
সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পরিবেশের কথা ভুলে যাবেন না। পরিবেশ নোংরা করবেন না, আবর্জনা যা নিয়ে যাবেন এবং যা পাবেন সাথে করে নিয়ে আসবেন। আপনার ভ্রমণ সুন্দর হোক।