২০২২ সালের আগস্টের ৮ তারিখ হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা থেকে সিএনজি রিজার্ভ নিয়ে চা বাগানের ভিতর দিয়ে দৃষ্টিনন্দন আঁকাবাঁকা পিচ ঢালা পথ ও মাটির রাস্তা পার হয়ে চলে আসি দমদমিয়া লেকে। পথিমধ্যে মনমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ সবুজ চা বাগান, গাছগাছালি এবং পাখির কিচিরমিচির শব্দ খুবই উপভোগ্য। বর্ষা মৌসুমে দমদমিয়া লেকের রাস্তা অনেক খারাপ থাকার কারনে দর্শনার্থীদের বেশ কষ্ট পোহাতে হয়। তবে রাস্তাঘাট আগের তুলনায় কিছুটা উন্নত হয়েছে। আমরা যখন দমদমিয়া পৌছাই তখন স্থানীয় কিছু মানুষ ছাড়া অন্য কোন পর্যটক ছিলোনা সেখানে। মেঘলা আকাশ আর একান্ত নিরিবিলি পরিবেশ মনকে প্রফুল্ল করে দেয়। আমরা এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে লাগলাম। এত সুন্দর পরিবেশ পাবো আমরা সেটা আশা করিনি, একপলক দেখেই প্রায় আত্মহারা হয়ে যাই।
বিশাল এরিয়া জুড়ে এই পর্যটন কেন্দ্র৷ কোন কোলাহল নেই যানজট নেই। আছে একরাশ মুগ্ধতা আর চারদিকে সবুজের হাতছানি। এ যেন সবুজ তুলিতে আঁকা কোন এক রূপকথার জগত৷ অতি সাধারণ রোজকার দৃশ্যগুলোও অনেক সুন্দর ও মোহনীয় লাগছিল। এই বিস্তৃত সবুজ তৃনভূমিতে স্থানিয় লোকজন ছাগলদের ঘাস খাওয়াতে নিয়ে আসে। বিকেল হলেই পাড়ার ছেলেরা দল বেধে মাঠে ফুটবল খেলে। এদিক সেদিক ভেড়ার পাল ছুটাছুটি করে। হাসের দল কখনো পানিতে ডানা ঝাপটায় তো কখনো ডাঙায় বসে গায়ে রোদ মাখে। লেকের একজায়গায় শান বাধানো পুরোনো এক পাকা ঘাটে বসে দুজন মধ্যবয়সী লোক মনের সুখে বড়সি পেতে মাছ ধরছিল আমরা গিয়ে উনাদের সাথে অনেক খোশগল্প করলাম জায়াগার ইতিহাস নিয়ে। তার একপাশেই ছোট ছোট বাচ্চারা পুকুরে মজা করে গোসল করছিল। যতটুকু পারি ক্যামেরায় সব বন্ধি করতে লাগলাম৷ স্বপ্নের মতো লাগছিলো সবকিছু। ছবির মত সুন্দর দৃশ্যগুলো যেনো চোখের সামনে বাস্তব হয়ে ধরা দিচ্ছিলো। দৃষ্টিনন্দন এমন একটা গ্রামেই যেন পৃথিবীর সর্বসুখ। একসময় নিজেদের আটকে রাখতে না পেরে আমরাও ওদের সাথে ফুটবল খেলায় মেতে উঠি। অল্পের জন্য হলেও ফিরে যাই নিজেদের শৈশব কৈশোরে। এলাকার সবাই অনেক বন্ধুসুলভ ছিলো। অপরিচিত জায়গা হিসেবে কোন ভয়ভীতিই কাজ করছিলোনা। দমদমিয়ায় চোখ জুড়ানো নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা দেখে যেকারো মন ভালো হয়ে যাবে। আছে দুটি বিশাল আকৃতির বটবৃক্ষ। তার ছায়া তলে সবুজ ঘাসে বসে ঘুরতে আসা লোকজন খাবার-দাবার ও বিশ্রাম পর্ব সেরে নেয় । পড়ন্ত বিকেলে ঝিরঝিরে মৃদু বাতাস শরীর মনকে প্রশান্ত করে তুলে। মনের বাতায়নে জাগায় বিশুদ্ধ প্রকৃতিপ্রেম।দমদমিয়া লেকের পাড়ে বিশেষ আকর্ষণ বিশাল আকৃতির চা-গাছ। যেহেতু চায়ের ফল পেতে সাত বছর সময় লাগে, তাই কেউ ফল ধরার অপেক্ষায় পাতা সংগ্রহ বন্ধ রাখেন। পাতা সংগ্রহ বন্ধ রাখলে চা গাছগুলোর সর্বোচ্চ ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয় বলে জানা যায়। এই বিশাল আকৃতির চা গাছগুলো সচরাচর চোখে পড়ে না। এখান থেকে চায়ের বিজ সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। আমরা অনেক্ক্ষণ নিজেদের মতো করে ঘুরাঘুরি করি। সন্ধার পর এই জায়গায় থাকা ঠিক হবেনা তাই রাত হওয়ার আগেই অনিচ্ছা স্বত্বেও ফিরে আসি চার দেয়ালের শহরে। অনেক আনন্দঘন মূহুর্ত ছিল যা শুধু উপভোগ করার মতই। দমদমিয়া লেকের সৌন্দর্য আমার ক্ষুদ্র লিখায় তুলে ধরা অসম্ভব।যাবার উপায়
দেশের যেকোন জায়গা থেকে বাস বা ট্রেনে আগে চলে আসতে হবে হবিগঞ্জ সদর বা শায়েস্তাগঞ্জ থানায়। শায়েস্তাগঞ্জ থেকে প্রাইভেট কার বা সি এন জি রিজার্ভ করে চলে যাওয়া যায় দমদমিয়া লেকে। শায়েস্তাগঞ্জ বা হবিগঞ্জ সদর থেকে সিএনজি সারাদিনের জন্য রিজার্ভ নিলে ভাড়া ১০০০ বা ১২০০ লাগতে পারে৷ গ্রামের ভেতরর রাস্তা অনেক ভালো পাকা রাস্তা। চা বাগানের ভেতরের মাটির রাস্তা দিয়ে না যাওয়াই ভালো।
চুনারুঘাট থেকেও গাড়ি রিজার্ভ নেয়া যায়। ভাড়া অনেকটা কমে পাওয়া যায়। হবিগঞ্জ থেকে শায়েস্তাগঞ্জ সিএনজি ভাড়া ৩৫ টাকা এবং শায়েস্তায় থেকে চুনারুঘাট ২০/৩০ টাকা। আর চুনারুঘাট থেকে দমদমিয়া আসা যাওয়া সিএনজি রিজার্ভ ৫০০/ ৬০০ টাকা।
খাবার সাথে নিয়ে গেলে ভালো স্পটে কোন দোকান পাট চোখে পড়েনি । ফ্লাস্কভর্তি চা কফি নিয়ে গেলে আরো ভালো লেক পাড়ে বসে আয়েশ করে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে উপভোগ করা যেতে পারে দমদমিয়ার অপরূপ সৌন্দর্য্য।
পরিশেষে বলবো যেখানেই যান চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।




