**
**সিলেট নামের উৎপত্তি:সিলেট নামের উৎপত্তি নিয়ে নানা মতবাদ রয়েছে। প্রাচীন গৌড়ের রাজা ‘গুহক’ তার কন্যা শীলাদেবীর নামে একটি হাট স্থাপন করেন। এ কারণে ‘শীলাহাট’ থেকে সিলট বা সিলেট নামের পরিচিতি হতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। এছাড়াও অনেকের মতে হিন্দু পুরাণ মতে সতীদেবীর হাড় বা হড্ড উপমহাদেশের ৫১ টি স্থানে পতিত হয়েছিল। সতীর দু’টি হাড় সিলেটেও পড়েছিল। সতীর অপর নাম ‘শ্রী’; তাই ‘শ্রী + হড্ড’ থেকে শ্রীহট্ট নাম হতে পারে।
হযরত শাহজালাল (রঃ) কর্তৃক ‘সিল হট্ যাহ্’ আদেশ থেকে ‘সিল্হট্’ নামের উৎপত্তি বলেও অনেকে মনে করেন। ৬৪০ খ্রিস্টাব্দে চীন দেশীয় বৌদ্ধ পন্ডিত ও পরিব্রাজক হিউয়েন সাং সিলেটকে শি-লি-চা-ত-ল’ বলে উল্লেখ করেছেন। খ্রীষ্টীয় একাদশ শতাব্দীতে মুসলিম পরিব্রাজক মনিষী আল্ বেরুনীর ‘কিতাবুল হিন্দ’ গ্রন্থে সিলেটকে ‘সীলাহেত’ বলে উল্লেখ করা হয়। ইংরেজ আমলে কাগজ-পত্রে প্রথমে ‘Silhet’ বলে উল্লেখ থাকলেও উনবিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে কাছাড় ইংরেজ অধিকারে আসার পর জেলার সদর স্টেশন ‘Silchar’থেকে পার্থক্য দেখাবার জন্য ‘Sylhet’ বলে উল্লেখ করা হয়। এভাবে আজকের সিলেট নামের গোড়াপত্তন হয়।
দর্শনীয় স্থানঃ
হজরত শাহজালাল (রঃ) মাজার, হজরত শাহপরান (রঃ) মাজার, রাতার গুল সোয়াম্প ফরেস্ট, লালাখাল, জাফলং, মালনীছড়া চা বাগান, ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর, লোভাছড়া, ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা, লাক্কাতুরা চা বাগান, হাকালুকি হাওর, বিছনাকান্দি, এডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ড, সোনাতলা পুরাতন জামে মসজিদ, রায়ের গাঁও হাওর ইত্যাদি।
দর্শনীয় স্থান নিয়ে বিস্তারিতঃ
মালনীছড়া চা বাগানঃ মালনীছড়া চা বাগান হল বাংলাদেশের সিলেট জেলায় অবস্থিত একটি চা বাগান। এটি উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন চা বাগান। মালনীছড়া চা বাগান বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের বৃহত্তম এবং সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত চা বাগান। ১৮৪৯ সালে লর্ড হার্ডসন ১৫০০ একর জায়গার উপর এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই চা বাগানটি সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্বল্প দূরত্বে অবস্থিত। ১৬৫০ সালে চীনে প্রথম চা উৎপাদন শুরু হয়। দেশটির বুদ্ধিজীবীদের প্রতিদিনকার জীবনের ৭টি কাজের একটি ছিল চা পান। তার প্রায় ২০০ বছর পরে ১৮৫৪ সালে পাক-ভারতীয় উপমহাদেশের সিলেটেই প্রথম চা উৎপাদন শুরু হয়। চায়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে ব্রিটিশ আর বাংলাদেশিরা। সিলেটের মালনীছড়া চা বাগান থেকেই উপমহাদেশে চা চাষের গোড়াপত্তন। এরপর দেড় শতাব্দীর মালনীছড়া বহু ইংরেজ, পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি ব্যবস্থাপকের হাত ঘুরে ১৯৮৮ সাল থেকে এখনও ব্যক্তিগত মালিকানায় রয়েছে। শ্রীমঙ্গলকে চায়ের দেশ বলা হলেও সিলেটের এই চা বাগান থেকেই চা চাষের গোড়াপত্তন। যা এখন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত কে টমাস প্লেন থেকে নেমে বাগানের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে বলেছিলেন, পৃথিবী এতো সুন্দর যে মালনীছড়া বাগান না দেখলে তা বোঝা যাবে না। শুধু হ্যারি কে টমাস নয়, সিলেটের চা বাগানের সবুজ মায়ায় প্রতিদিন জড়ো হন হাজার হাজার দেশি বিদেশি পর্যটক।
রাতারগুলঃ রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট এটি সিলেট জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। রাতারগুল বনটি প্রায় ৩০,৩২৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এই বিস্তৃর্ণ এলাকার ৫০৪ একর জায়গায় রয়েছে বন আর বাকি জায়গা ছোট বড় জলাশয়ে পূর্ণ। তবে বর্ষায় পুরো এলাকাটিকেই দেখতে একই রকম মনে হয়। রাতারগুল ‘সিলেটের সুন্দরবন’ নামে খ্যাত। এই রাতারগুল জলাবন বছরে চার থেকে পাঁচ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকা। তখন জলে ডুবে থাকা বনের গাছগুলো দেখতে সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় জমায়। অনেক পর্যটক রাতারগুলকে বাংলাদেশের আমাজন বলেও ডাকেন। বর্ষায় গাছের ডালে দেখা মিলে নানান প্রজাতির পাখি আবার তখন কিছু বন্যপ্রাণীও আশ্রয় নেয় গাছের ডালে। এছাড়াও শীতকালে এখানকার জলাশয়ে বসে হাজারো অতিথি পাখির মেলা। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর (বর্ষার শেষের দিকে) পর্যন্ত রাতারগুল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগ রাতারগুল বনের ৫০৪ একর জায়গাকে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে। রাতারগুল একটি প্রাকৃতিক বন, স্থানীয় বন বিভাগ এখানে হিজল, বরুণ, করচ সহ বেশ কিছু গাছ রোপণ করেন। এছাড়াও এখানে চোখে পড়ে কদম, জালিবেত, অর্জুনসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির জলসহিষ্ণু গাছপালা।
হাম হাম জলপ্রপাত: হাম হাম কিংবা হামহাম বা চিতা ঝর্ণা, বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গভীরে কুরমা বন বিট এলাকায় অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক জলপ্রপাত বা ঝরণা। জলপ্রপাতটি ২০১০ খ্রিস্টাব্দের শেষাংশে পর্যটন গাইড শ্যামল দেববর্মার সাথে দুর্গম জঙ্গলে ঘোরা একদল পর্যটক আবিষ্কার করেন। দুর্গম গভীর জঙ্গলে এই ঝরণাটি ১৩৫, মতান্তরে ১৪৭ কিংবা ১৬০ ফুট উঁচু, যেখানে বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু ঝরণা হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃত মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের উচ্চতা ১৬২ ফুট।তবে ঝরণার উচ্চতা বিষয়ে কোনো প্রতিষ্ঠিত কিংবা পরীক্ষিত মত নেই।সবই পর্যটকদের অনুমান। তবে গবেষকরা মত প্রকাশ করেন যে, এর ব্যপ্তি, মাধবকুণ্ডের ব্যাপ্তির প্রায় তিনগুণ বড়।
বিছানা কান্দি:
স্থানীয় ফলঃ
স্থানীয় ফলের মধ্যে সাতকরা(হাতকরা) অন্যতম। সিলেটের আঞ্চলিক রান্না সাতকরা দিয়ে গরুর মাংস! সাতকরা দিয়ে গরুর মাংসের কথা শুনলে অনেকেরই জিভে জল চলে আসে! সাতকরা হচ্ছে এক ধরনের লেবু জাতীয় ফল! এই ফল ভারতের আসামের পাহাড়ি এলাকার আদি ফল, যা বর্তমানে সিলেটের জৈন্তাপুর আর জাফলং ছাড়াও স্থানীয় পাহাড়-টিলায় চাষ হয়। সাতকরা একটি ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল এবং এর পুষ্টিমান অতি উন্নত। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস, এমনকি এটি ওষধি ফল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সাতকরা দিয়ে রান্না করা গরুর মাংস সিলেটে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ইদানিং এর জনপ্রিয়তা সিলেট ছাড়িয়ে দেশের সব অঞ্চলের মানুষের মাঝেই ছড়িয়ে পড়েছে। মাংস ছাড়াও সাতকরা দিয়ে বিভিন্ন বড় মাছ ও ছোট মাছও রান্না করা যায়। আকারে খানিকটা গোল আর হালকা ওজনের সাতকরা সবচেয়ে সুস্বাদু। সিলেট অঞ্চলের মানুষের কাছে রসনার অন্যতম অনুষঙ্গ এই সাতকরা। তুমুল চাহিদার একান্ত নিজস্ব এই ফল এখন সিলেটি সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের অংশ হয়েই আছে।
সিলেটের স্থানীয় খাবার গুলোর মধ্যে গরুর মাংস দিয়ে হাতকরা (সাতকরা), গরুর মাংসের আখনী, হাঁস দিয়ে বাঁশ রান্না শুনতে অবাক লাগলেও এটি সিলেটের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। সিলেটের খাবারের মধ্যে এটি অন্যতম একটি সুস্বাদু খাবার। যারা একবার হাঁস-বাঁশের রান্না খেয়েছেন, তাঁরাই এর স্বাদের গুনাবলী বুজতে পেরেছেন। তবে অনেক সিলেটিরাই এটা সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না।
বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের অনেকেই এ মজাদার খাবার সম্পর্কে জানে না।তার প্রধান একটি কারণ বাঁশের মোচা বা সিলেটি আঞ্চলিক ভাষায় ‘করিল’ এর সল্পতা।
সিলেট সম্পর্কে আরো বিস্তারিত পরবর্তী পোস্টে লিখবো।
Tourist places image Copyright by me(@SabbirShawon)
#TeamBangladesh
#BDLG
#SylLG