তাজহাট জমিদার বাড়ি রংপুরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। রংপুর শহর হতে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে তাজহাট নামক গ্রামে এই প্রাসাদটির অবস্থান। তাজহাট জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা স্বর্ণ ব্যবসায়ী মান্নালাল এর মৃত্যুর পর তার দত্তক পুত্র গোপাল লাল রায় এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন। এটি নির্মাণে প্রায় ২০০০ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়েছিল। ১৯১৭ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। প্রাসাদটির ২ পাশে রয়েছে ২ টি পুকুর, সামনে বিশাল মাঠ, ফুল ও ফলের বাগানসহ চারদিকেই রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ শোভা।
চারতলা বিশিষ্ট তাজহাট জমিদার বাড়ির চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় জমিদার গোপালের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র রাখা আছে। নিচ তলায় রয়েছে দরবার হল ঘর। নিচ থেকে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত যেতে মোট ৩১ টি সিড়ি রয়েছে, যার প্রত্যেকটি ইতালীয় ঘরানার মার্বেল পাথরে তৈরি। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে রংপুর জাদুঘর, যা ২০০৫ সালে সেখানে স্থানান্তরিত করা হয়। জাদুঘরে রয়েছে তৎকালীন জমিদারদের ব্যবহৃত তলোয়ার, বল্লমসহ যুদ্ধে ব্যবহৃত নানানরকম সরঞ্জামাদি, রোমান দেবদেবীর মূর্তি, দশম ও একাদশ শতাব্দীর টেরাকোটা শিল্পকর্ম, আরবি ও সংস্কৃত ভাষায় লেখা বেশকিছু প্রাচীন পাণ্ডুলিপি, মহাভারত, রামায়ণসহ মুঘল আওরঙ্গজেবের সময়কার কোরআন, তৎকালীন সময়ের পিতল ও কাসার তৈরি জিনিসপত্র। জাদুঘরে ৩০০ এর অধিক মুল্যবান নিদর্শন রয়েছে। জাদুঘরে প্রবেশের জন্য আলাদা কোন প্রবেশ ফি লাগে না। জাদুঘরের ভিতরে ছবি তোলা বা ভিডিও করা নিষেধ।
১৯৮৪-১৯৯১ সাল পর্যন্ত প্রাসাদটি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বেঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
তাজহাট জমিদার বাড়ি ও রংপুর জাদুঘর পরিদর্শনের সময়সূচিঃ
- গ্রীষ্মকালীন সময় (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) ঃ সকাল ১০ টা - সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত।
- শীতকালীন সময় (অক্টোবর-মার্চ) ঃ সকাল ৯ টা - বিকাল ৫ টা পর্যন্ত।
* দুপুর ১ঃ০০ - ১ঃ৩০ মিনিট পর্যন্ত জাদুঘর মধ্যাহ্ন বিরতির বন্ধ থাকে।
* রবিবার পূর্ণ দিবস এবং সোমবার অর্ধদিবস জাদুঘরটি বন্ধ থাকে।
তাজহাট জমিদার বাড়ি প্রবেশ ফিঃ-
- প্রাপ্ত বয়স্ক দেশি দর্শনার্থীঃ ২০ টাকা
- মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীঃ ০৫ টাকা
- সার্কভুক্ত দেশসমুহের দর্শনার্থীঃ ১০০ টাকা
- অন্যান্য দেশের দর্শনার্থীঃ ২০০ টাকা
- ৫ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের প্রবেশ ফি লাগে না।
তাজহাট জমিদার বাড়ি যানবাহন পার্কিং ফিঃ-
- বাসঃ ১৫০ টাকা (ভ্যাটসহ)
- মাইক্রোবাস, কারঃ ৫৭.৫০ টাকা (ভ্যাটসহ)
- মোটরসাইকেলঃ ১১.৫০ টাকা (ভ্যাটসহ)
ঢাকা থেকে তাজহাট জমিদার বাড়ি যাওয়ার উপায়ঃ
রাজধানী ঢাকার গাবতলি, কল্যাণপুর ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে রংপুরগামী বাসে করে রংপুর বাসস্ট্যান্ড যেতে হবে। সেখান থেকে অটোরিকশা বা সিএনজিতে করে জমিদার বাড়ি যাওয়া যাবে। ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামগামী বাসে উঠলে সরাসরি জমিদার বাড়ির সামনে নামা যাবে। এছাড়া ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া রংপুরগামী ট্রেনে করেও যাওয়া যায়।