Sundarban | ভ্রমন গল্প | Episode 01 | হারবারিয়া - আন্দারমানিক - করমজল - মোংলা

সুন্দরবন মানেই হাজার হাজার গাছ,

সুন্দরবন মানেই নদীতে সমানে কুমির আর মাছ,

সুন্দরবন মানেই হাজার পাখির ডাক,

সুন্দরবন মানেই শত শত বানরের ঝাক,

সুন্দরবন মানেই একটা চাপা ভয়…

সুন্দরবন মানেই…

দেখুন, কারো কাছে পাহাড় ভাল লাগে, কারো কাছে সমুদ্র ভালো লাগে, কারো কাছে নদী আবার কারো ভালো লাগে চাঁদনী রাত। একেকজনের পছন্দ একেক রকম। আমার কাছে যেটা ভালো লাগে আপনার সেটা ভালো নাও লাগতে পারে। আমি প্রকৃতির সবকিছুই পছন্দ করি, কিন্তু তার মধ্যে বনই আমার সবথেকে বেশি ভালো লাগে।

আর বনের কথা আসলে সুন্দরবনের সামনে আর কোনোটিই আসবেনা।

আমি আগেও তিনবার সুন্দরবন ভ্রমন করেছি, প্রথমে শরণখোলা অঞ্চল তারপরে চরখালী অংশ তারপর লালদিয়া অংশ ভ্রমণ করেছি। যে বিষয়ে আমার চ্যানেলে ভিডিও আছে।

সুন্দরবন ভালো করে এক্সপ্লোর করার জন্য আলাদা আলাদা ভাবে ভ্রমন করছি, এবারে যাচ্ছি চাঁদপাই অংশে, এই অংশে আমরা দুইদিন এক রাত অবস্থান করব এবং আন্দারমানিক, হারবারিয়া, করমজল পয়েন্ট ঘুরে দেখব।

তাহলে চলুন শুরু করে দেই আজকের ভ্রমণ গল্প……

কনকনে শীতে খুব ভোরে কুয়াশার বুক চিরে রওনা হলাম আমাদের গন্তব্যে, আমাদের প্রথম গন্তব্য জয়মনী, এটা মংলা থেকে নিচের দিকের একটা যায়গা, আমরা মংলা না গিয়ে সরাসরি জয়মনীতে যাব কারন ওখান থেকে আমাদের পয়েন্টগুলি অনেক কাছে, আর জয়মনি আমার বাড়ি থেকে অনেক কাছে…

আমরা জয়মনীতে পৌছে গেছি। এই যায়গাটা সুন্দরবনের একদম কাছাকাছি, এই নদীর ওপার থেকেই সুন্দরবন শুরু।

এখান থেকে এই বোটে ঊঠবো আমাদের দুই দিনের খাবার আর পানি নিয়ে। বোট আমাদের আগে থেকেই বুকিং করা ছিল…

এখন সময় বারোটা ত্রিশ মিনিটের মতো, আজ প্রথমদিনে আমরা যাব আন্দারমানিক ইকো ট্যুরিজম সেন্টার।

শেলা নদীর বুক চিরে বোট চলছে…

আমরা সবাই বোটের উপরে, আর নিচে আমাদের জন্য দুপুরের খাবার রান্না হচ্ছে…

প্রায় দুই ঘন্টা জংগলের ভেতরে বোট চালানোর পরে আমরা পৌছালাম আন্দারমানিক ইকো টুরিজম সেন্টার। এখানে দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা বোট থেকে নামবো।

আমরা বোট থেকে নামতেই একজন বনরক্ষী আমাদের দেখালো আজ সকালেই এখানে বাঘ এসেছিলো, আর এখনও এই এলাকাতেই বাঘ থাকার সম্ভাবনা আছে তাই আমাদেরকে সাবধানে চলাফেরা করতে বলল…

আন্দারমানিকে হরিনের বেস্টনি, উচু ওয়াচ টাওয়ার এবং জংগলের গহীনে প্রায় ১ কিলোমিটার ফুট ট্রেইল আছে।

এখানে প্রবেশ করতে বন বিভাগকে জনপ্রতি ৭০ টাকা এবং বোট প্রতি আকার অনুযায়ী ৮০০-৩০০০ টাকা পর্যন্ত প্রদান করতে হয়।

ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের অফিসের আশেপাশে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে আমরা এবার জঙ্গলের গহীনে যাওয়া শুরু করলাম, আমরা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় অনুমতি নিয়ে কোন গার্ড ছাড়াই ভেতরে প্রবেশ শুরু করলাম।

গা ছমছমে একটা অবস্থা, ঠান্ডা হাওয়া বইছে, চারদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর মাঝে মাঝে দু একটা বাঘের গর্জনে গা শিউরে উঠছে। আমরা সাবধানে বনের গহীন থেকে ঘুরে আবার ফরেস্ট অফিসের এখানে ফিরে আসলাম। এখানে একটা ওয়াচ টাওয়ার আছে, ওয়াচ টাওয়ারে উঠে উপর থেকে জংগলের এই অংশ ভালো ভাবে দেখলাম আর উপভোগ করলাম…

এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে তাই আমাদেরকে এখন জঙ্গল থেকে বেরিয়ে যেতে হবে।

বন বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী সন্ধ্যা ৫টার পরে আর বনে থাকা যাবে না।

আমরা এখন জঙ্গলে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে বোট নোঙর করব এবং রাতে ওখানেই থাকবো।

রাতে প্রচন্ড ঠান্ডা ছিল তাই আমরা বাইরে বেশিক্ষন থাকতে পারিনি। ঠান্ডায় মনে হচ্ছিল যেন জমে যাচ্ছি।

রাতের রান্না নিজেরাই করলাম, আমাদের রনিভাই হাসের মাংসটা মোটামুটি ভালই রান্না করে, বাবুর্চির থেকে ভাল।

একটু বেশি রাতে বার বি কিউ পার্টি করলাম। আরও অনেক কিছু পরিকল্পনা ছিলো কিন্তু ঠান্ডায় তার আর হলনা। অল্প কিছুক্ষন আড্ডা দেওয়ার পরেই সকলে ঘুমাতে গেল।

Day 02

শুভ সকাল

সারা রাত ঘুম হলনা আমার আর রনি ভাইয়ের, দীলিপ দাদাও প্রায় জেগেই ছিল। খুব সকালে বোটের ছাদে উঠলাম, কুয়াশার চাদরে চারদিক আবৃত।

সুর্য একটু ওঠার সাথে সাথে আমরা ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করে রওনা হলাম আজকের গন্তব্যে।

আজকে আমরা প্রথমে যাব হারবারিয়া ইকো ট্যুরিজম সেন্টার। এটা একটা অভয়ারণ্য। পষুর নদী হয়ে আমরা পৌছালাম হারবারিয়াতে।

সুন্দরবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও একইসঙ্গে বিপজ্জনক স্থান হচ্ছে হারবাড়িয়া। এটি বাঘের বাড়ি নামে পরিচিত। এখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার আর নানান বৈচিত্র্যময় প্রাণী ও পাখি দেখা যায়। খুব কাছ থেকে হরিণ দর্শন মেলে। বানর ও বন্য শূকর তো সব যায়গায়তে আছেই।

বলে রাখি এখান থেকে জংগলে ঢুকতে বন বিভাগকে জনপ্রতি ১৭২ টাকা এবং বোট প্রতি ২৫০০ থেকে ৭০০০ টাকা ফি প্রদান করতে হয়, এছাড়া জংগলে প্রবেশ করতে সাথে একজন গার্ড নিতে হয়, গার্ড ফি ৫০০ টাকা।

এখানে ঢোকার সাথে সাথেই আমাদের সাথের তিনজনকে অনেকগুলো বানর এসে স্বাগত জানালো, পরে জানতে পারলাম এদের পুর্বপুরুষের সাথে বানরের বংশীয় সম্পর্ক ছিল।

এখানে অফিসিয়াল কার্যক্রম সেরে আমরা গার্ড নিয়ে বনের গহীনে চললাম, এখান থেকে বনের গহীনে প্রায় দের কিলোমিটারের মত দীর্ঘ্য ফুট ট্রেইল আছে, এটা অভয়ারণ্য হওয়ায় যে কোনো সময়ই আপনার সামনে বাঘ সহ অন্যান্য যে কোনও প্রানীই সামনে পরতে পারে তাই সবসমই সজাগ থাকতে হবে। আমরা গার্ডকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গলের অনেক গহীন থেকে ঘুরে ফিরে আবার হারবারিয়া অফিসের দিকে ফিরলাম।

এখানে বণ্যপ্রানীদের পানি পানের জন্য একটি বড় পুকুর আছে, যেখানে সারা বছরই লাল শাপলা ফুটে থাকে যায়গাটা অনেক সুন্দর আমরা সেখানেও কিছুটা সময় কাটালাম, আর আমাদের সাথীদের ছবি তোলা তো আছেই।

এখান থেকে বেড়িয়ে আমরা এখন যাব আমাদের পরবর্তি গন্তব্য করমজল ইকো ট্যুরিজম সেন্টার।

হারবারিয়া থেকে বেরোনোর সময় ঘাটে অনেক বানরের সাথে কিছুক্ষন দুষ্টুমি করে আমরা আবার বোটে আমাদের পরবর্তি গন্তব্যে রওনা হলাম।

এখানে আসলে বানরকে কখনও খাবার দিবেন না, এরা পর্যাপ্ত খাবার না পেলে অনেক ঝামেলা করে, এমনকি আমাদের একজনকে দুটো থাপ্পর পর্যন্ত মেরেছে।

হারবারিয়া থেকে বেড়িয়ে পষুর নদীতে আমাদের বোট আসতেই আমরা নদীর তীরে অনেক হরিন দেখলাম, গাইড বলল এই সিজনে প্রতিদিন সকালেই ওরা এখানে পানি খেতে আসে।

করমজল যেতে যেতে আমরা সকালের খাবার খেয়ে নিলাম।

নদীতে যেতে যেতে অনেক মজা করলাম। আবার মাঝে মাঝে একদম নীরবে প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম।

প্রায় দুই ঘন্টা পরে আমরা করমজল পৌছালাম। একদিনের জার্নির জন্য করমজল পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। কারণ সুন্দরবনের প্রবেশপথে ও মংলা বন্দরের সবচেয়ে কাছে করমজল অবস্থিত। পাখিপ্রেমীদের জন্য এটি চমৎকার একটি জায়গা। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিমুগ্ধ হওয়ার মতো। বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী তো আছেই। হরিণ ও কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র এই করমজল। এছাড়া এখানে লবণাক্ত পানির কুমির, ডুব হাঁস, বানর, সাপ, শিয়াল, নদীর ডলফিন চোখে পড়ার মতো।

এই যায়গাতে নামতেই অনেক বানর দেখতে পেলাম মানুষের কাছাকাছি হাটাচলা করছে। এই জায়গাটাকে মিনি চিড়িয়াখানা বা জাদুঘর বলা যেতে পারে। সুন্দরবনের কয়েকটা জাতের হরিন আর কুমির খাচায় বন্দি আছে এখানে। একটা শুশুক জাদুঘর আছে, যেখানে সুন্দরবনের কিছু জাতের ডলফিনের কঙ্কাল এবং এদের বিষয়ে ইনফরমেশন দেওয়া আছে। এখান থেকে চাইলে সুন্দরবনের মধু কিনতে পারবেন। এখানে হাটতে হাটতে কিছু খেতে চাইলে খুবই সাবধানে খাবেন, কারন যে কোনও সময় বানর এসে থাবা দিতে পারে।

এখানে সুন্দরবনের ভেতরে যাওয়ার জন্য প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা ফুট ট্রেইল আছে। আমরা সুন্দরবনের গহীন থেকে অনেক্ষন ঘোরাঘুরি করে আবার ফরেস্ট অফিস এলাকায় ফিরে এলাম, পথে একটা ওয়াচ টাওয়ার ছিল কিন্তু কোনও কারনে বন্ধ ছিল তাই উঠতে পারিনি। এখান থেকে বাড়ির জন্য কিছু কেনাকাটা করে আবার বোটে ফিরে এলাম। আমার কাছে প্রকৃতপক্ষে এই যায়গাটা খুব বেশি ভালো লাগল না, কারন অনেক মানুষ আর মানুষের ফেলা ময়লা।

আসলে আমরা যেখানেই যাব সেখানে আর কিছু থাকুক আর না থাকুক ময়লা থাকবেই।

এ বার ফেরার পালা। শেলা নদীর পাশের একটা খালের ভেতরে এসে বোটের ইঞ্জিন বন্ধ করে বেশ খানিক ক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম সবাই— যত ক্ষণ অনুভব করা যায় এই নির্জনতা!

সব মিলিয়ে এবারের জার্নিতে সকলেরই অনেক মজা হয়েছে , কিন্তু আমাদের সিফাত ভাই যদি অসুস্থ না হত আর মামুনের গার্লফ্রেন্ড বা হবু বৌ যদি মামুনকে বার বার ফোন করে প্যারা না দিত, তাহলে তারাও অনেক মজা করতে পারত।

এবারের গল্প এটূকূই, আবার দেখা হবে নতুন যায়গার ভ্রমন গল্প নিয়ে…

Special Thanks Our Travel Partner…

5 Likes

@mrbapi

Auf jeden Fall eine schöne Flussreise mit vielen Erkundungen.

Es scheint auch ein wirklich sehr schönes Gebiet zu sein und die guten Bilder zeigen es.