“সারী নদীর ওপারে এক রাত “ "Spending The Night on the bank of River Sari"

ভ্রমণকাল ২০-২১ ফেব্রুয়ারি , ২০২১ সাল ।

দুই দিন ধরে সুনামগন্জ শহর থেকে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের বর্ডার রোড ধরে এবং মেঘালয় পাহাড় সারি কে হাতের বাঁ দিকে রেখে , সাইকেল চালাতে চালাতে ২০ তারিখ মাগরিবের সময় এসে থামলাম “লালাখাল “ নামে পরিচিত এই সারী নদীর পাড়ে । তখন দিনের আলেী নিভু নিভু । সারী নদীর পানির রং এর বিশেষত্ব বুঝা যায় না তবে , হীম শিতল পানি পায়ে যখন স্পর্শ করলো , তখন পুরো শরীর যেন প্রাণ ফিরে পেলো ।

তখনও কিছু কিছু পর্যটক সারী নদী ঘুরে এসে ,ইন্জিন চালিত নৌকা থেকে নামছেন । আমাদের যেতে হবে সারী নদী পার হয়ে ওই টিলার ওপর , যার নাম লালখাল টি স্টেট বা লালাখাল চা বাগান । এই সন্ধ্যা বেলায় ও নদীর সচ্চ পানির কারনে , নিচের নুড়ি পাথর দেখা যাচ্ছিলো । আমরা জনপ্রতি ৫ টাকা এবং সাইকেলের জন্য ৫ টাকা দিয়ে নৌকায় নদী পার হয়ে , ও পাড়ের বটতলা বাজারে গিয়ে মাগরীবের নামাজ আদায় করে নিলাম । আমাদের দলের বেশিরভাগ সদস্যই এখনো এসে পৌছায় নি । ছোট বাজার , মুলত বিকেল তিনটের পরে সব দোকান খোলে । বাজারে তিন / চারটি ছোট ছোট হোটেল টাইপ দোকান রয়েছে , কিন্তু কোন হোটেলেই ভাত জাতীয় খাবার নেই । ছোট ছোট পেয়াজু এবং ছোলা সব দোকানেই আছে । আমরা দু – তিনটি দোকানের সবার ই পেয়াজুর স্বাদ নিলাম, কিন্তু একটি দোকানের পেয়াজুর স্বাদে-গুনে ভালো লাগলো । এই বাজারে শুধু রবি এবং বুধবার ভাত জাতীয় খাবার রান্না করা হয় তা ও আবার সিলেটের আখনি নামে পরিচিত এব প্রকারের ভাত ।

ইতোমধ্যে আমাদের বেশিরভাগ সদস্য চলে এসছে । আমাদের রাতের থাকার স্থান “টি স্টেটের “ মাঠ । আমাদের সবারই নিজস্ব তাবু রয়েছে । আর এখানে রাতে থাকতে হলে , আগে থেকেই অনুমতি নিতে হয় , বাগানের ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে । ঘুটঘুটে অন্ধকারে টর্চ লাইটের আলোতে সবাই যার যার তাবু সাজিয়ে , ব্যাকপেক গুলো তাবুর ভিতরে রেখে ফ্রেশ হতে গেলো । আমরা সবাই বাগানের মসজিদের ওজুর জায়গায় ফ্রেশ হলাম , কেউ কেউ আবার ওপর থেকে নিচে নেমে , সারী নদীতে গোসল সেরে নিলেন । রাতের খাবারের জন্য বটতলা বাজারের নাইটগার্ড কে রাজি করিয়ে , তার বাড়ি থেকে রান্না করিয়ে নিয়ে আসা হলো । সবাই খুবই পেটপুরে খেলো । রাতে আমরা আরেকদপা আড্ডা দিলাম : টি স্টেটের “ মাঠে । এদিকে চা শ্রমীকদের আয়োজনে মহান একুশের গান বাজতে লাগলো । আমাদের পরবর্তি দিনের গন্তব্য ছিলো সিলেটের কাছাকাছি গিয়ে , রিজার্ভ বাসে উঠবো । আমাদের বেশিরভাগ সদস্যদের তখনো সারী নদী তথা লালাখালের সৌন্দর্য চোখে ধরা পড়েনি । সবাই অরো কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো ।

পরদিন ভোরে যে যার মতো ঘুম থেকে উঠেই চারদিক তাকিয়ে রইলো , চা বাগানের স্যেন্দর্য সবাইকে বিমোহিত করলো , যদিও বসন্তকাল চলছে । চারদিক একটু রুক্ষ – শুক্ষ । তথাপি ভোরের আলোয় “ চা বাগান “ অনন্যরুপ । এদিকে কেউ উপর থেকে ”সারী নদী”র পানি দেখছে আর তাকিয়েই আছে । কি অপরুপ , আলোর পরিবর্তনের সাথে সাথে পানির রং কখনো সবুজ আবার কখনো নীল । আসোলে আমাদের ক্যাম্প সাইট টি ছিলো লালাখাল ভিউ পয়েন্টের ঠিক উপরেই । সদস্যদের সবাই সকাল বেলার সারী নদী দেখে সিদ্ধান্ত নিলেন , আমরা সকালেই যাচ্ছিনা । সারাদিন এখানেই থাকবো , সারী নদীতে গোসল করবো , টি স্টেটের মাঠে খেলবো , তারপর বিকেলে রওনা দিবো । যেহেতু রিজার্ভ বাস , রিকোয়েস্ট করলে জৈন্তা বাজারে চলে আসবে । বাসের চালক কে ফোন দেয়া হলো , তিনিও সহমত প্রকাশ করলেন । আমাদের সবাই খুব খুশি হলেন , একটা দিন লালাখালের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে এই ভেবে । দিনশেষে সারীনদী এবং চা বাগান আমাদের নিরাশ করেনি , বরং চমৎকার কিছূ সময় উপহার দিয়েছে ।

” লালাখাল “ এটি মুলতঃ বাংলাদেশের সারী এবং ভারতের গোয়াইন নদীর মিলনস্থল । সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলায় এর অবস্থান । একবারে বাংলাদেশ ভারতের সীমানা সংলগ্ন । শীতের সময়ই লালাখালের আসল সৌন্দর্য ( পানির রং সবুজ ) দেখতে পাওয়া যায় । তবে বর্ষায় “চা – বাগান “ সবুজাভাব একটু ভিন্ন রকম ।

কিভাবে যাবেন : যদিও আমরা সাইকেলে ভ্রমন করেছি , তথাপি আমাদের দুপুরের খাবারের আয়োজনের জন্য জৈন্তুপুর বাজারে গিয়েছিলাম । সে আলোকে , জৈন্তাপুর বাজার থেকে শেয়ারে সিএনজি / ব্যাটারীচালিত রিকশা পাওয়া যায় , যার ভাড়া প্রতিজন ২০ টাকা করে । চাইলে রিজার্ভ ও নেয়া যায় । আর সিলেট থেকে জাপলংগামী যে কোন যানবাহনে করে , জৈন্তাপুর নামা যায় । ব্যাক্তিগত গাড়িতে করে , জৈন্তাপুর বাজারের পূর্বে ( স্টিল ব্রিীজের ) ফেরিঘাট বাজার থেকে হাতের ডানের রাস্তা ধরে ৭ কি.মি. ।

সারীনদীর ওই পাড়ের বাজারে পূর্বে অর্ডার দেয়া স্বাপেক্ষে ভাত জাতীয় খাবার পাওয়া যাবে । তবে এ পাড়ে সব সময়ই খাবার পাওয়া যায় । “টি স্টেটে “ দিনের বেলায় ঘুরা যায় , তবে রাতে থাকতে হলে অনুমতি নিতে হয় ।

পরিশেষে ,

আমরা চাইলে প্লাস্টিক পন্য বর্জন কিংবা কম ব্যবহার করতে পারি ( যেমন পানির বোতল রিফিল করা ) , তাহলে হয়তো আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম লালাখাল কিংবা সারী নদীর সৌন্দর্য দেখতে পারবে ।

10 Likes

that’s cool @Mainul , nice experience isn’t it?

@Mainul অসাধারন লেখা। সাইক্লিং, ভ্রমন এবং ক্যাম্পিং অসাধারন সব অনুভূতি। সাথে উপভোগ্য সকল সোন্দর্য। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

আরো পোস্ট দেখায় অপেক্ষায়!

হ্যাপী গাইডিং!

সব সময় চেষ্টা করবেন শুরুতে একটা ছবি দেয়ার আকর্ষণীয় করে তোলে পোস্ট । এছাড়া লেখার ফাঁকে ফাঁকে ছবিগুলো দিলে পুরো লেখার ধরনটা পাল্টে যায়। আশা করি সামনের দিনগুলোতে খেয়াল রাখবেন

@Mainul

#7yearsofBDLG #localguidesbd #bangladesh