বেশ কিছুদিন ধরেই চরাঞ্চলে যেতে মন চাচ্ছিল। কিন্তু ঘুরার মত বাজেট না থাকায়, আর মন মত কাঁচা রাস্তায় চালানোর জন্য আমার কাছে সাইকেল দিয়ে ভ্রমন সবচেয়ে বেস্ট মনে হয়। সেই সূত্রে ১১/০২/২০২০ ভোর সকালে বের হই আকাশ ভাই সহ।
ফেব্রুয়ারীর প্রথম অংশ, ভোরের দিকে ঠান্ডাটা এখনো হাড় কাপানো। টার্গেট ছিল রোদ ওঠার আগেই ফোর্সলি চালিয়ে যত দূর আগানো যায়। কিছু জায়গায় বাশ দিয়ে বানানো বিস্রামাগার পেয়ে জিরিয়ে নিয়েছি। এই জিনিস মিস করা যায়না।
গজারিয়া দিয়ে মেঘনা নদী পার হলাম ট্রলারে করে। পরের রাস্তাটুকু কাজ হচ্ছে বিধায় বেশ ভোগান্তি পোহাতে হল। নাস্তা খেয়ে এরপর আবার শুরু করলাম, টার্গেট আলদী বাজার। ওখানকার মাঠা আর মাখন বেশ জনপ্রিয়, তাই বেলা বাড়ার আগেই চেখে দেখতে হবে। অতঃপর প্রায় নয়টার দিকে আলদি বাজার পৌঁছাই।
১৫ টাকা দামের এক গ্লাস মাঠা মুখে দিতেই তৃপ্তিতে ভরে গেল মন। সাইক্লিং করে গিয়েছি বলেই হয়তো আরো বেশি মজা লেগেছে। দুইজনে ৫ গ্লাস খেয়ে ফেললাম নিমিষেই। আরও খেয়েছি মাখন ৪০টাকায় ১ প্লেট, ও ছানা ২০টাকায় এক ভাগ।
এরপর উদ্দেশ্য “সোনারং জোড়া মঠ” দেখা।
গাড়ির রাস্তা দিয়ে না গিয়ে গ্রামের ভেতর দিয়ে কাঁচা রাস্তা ধরে যেতে থাকলাম। দুই পাশে বিস্তীর্ণ আলুর মাঠ। যতদূর চোখ যায় সবুজ আলুর ক্ষেত। এরপর টঙ্গীবাড়ী হয়ে জোড়া মঠ পৌঁছে গেলাম।
কথিত ইতিহাসে জোড়া মঠ হিসাবে পরিচিত লাভ করলেও মুলত এটি জোড়া মন্দির। মন্দিরের একটি প্রস্তর লিপি থেকে জানা যায় এলাকার রূপচন্দ্র নামে হিন্দু লোক বড় কালীমন্দিরটি ১৮৪৩ সালে ও ছোট মন্দিরটি ১৮৮৬ সালে নির্মাণ করেন। ছোট মন্দিরটি মুলত শিবমন্দির। বড় মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ১৫ মিটার। মঠের ফোকরগুলিতে প্রচুর টিয়াপাখির বাসা। কোন ধর্মীয় কর্মকাণ্ড হয় না এখন আর।
এরপর আরো প্রকৃতি দেখতে দেখতে চলে আসলাম “বাবা আদম মসজিদ” দেখতে।
একটি প্রাচীন মসজিদ, যা ১৪৮৩ সালে নির্মিত। মালিক কাফুর কর্তৃক জামে মসজিদ হিসাবে মসজিদটি নির্মিত হয়। মসজিদের চত্বরে বাবা আদম শহীদে [রহ.] মাজার অবস্থিত। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এ স্থাপনার তত্ত্বাবধান করছে।
মুঘল আমলের নকশায় করা বহু গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি এখনো সচল রয়েছে। এ মসজিদে নিয়মিত জামাতে নামাজ আদায় করা হয়।
এরপর মুন্সিগঞ্জ পার হয়ে সাবদি ফুলের বাগান হয়ে ফেরার পরিকল্পনা করলাম। নানা রকম ফুলের চাষ হয় এই গ্রামে। আর এখন ফুল ফোটার সবচেয়ে উত্তম সময়।
ফুলবাগান দেখে বাসায় ফিরে আসলাম ততক্ষণে দুপুর দুটো বেজে গেছে। গোসল করে খেয়ে বিশ্রাম নিলাম কিন্তু চরাঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ঘোর তখনো কাটছে না। এ যেন গোপন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, যা বার বার দেখতে ইচ্ছে জাগে। এইদিন মোট ৭২ কিলোমিটার সাইক্লিং করেছিলাম।
আবারও যাবো অন্য কোন একদিন, অন্য কোন মেঠো পথে, দূর হতে দূরান্তে।









