প্রত্যন্ত গ্রামের প্রথম নারী ফ্রিল্যান্সার রিনা।
টিনের ছাউনি আর মাটির দেয়ালের ঘর ঘরে দরিদ্র বর্গাচাষি সিরাজুল ইসলামের ছয়জনের পরিবার। সবার আহার জোটাতেই হিমশিম অবস্থা। সেখানে ভালো ইন্টারনেট সংযোগের আশা করা তো বিলাসিতা। আর গ্রামে বিদ্যুতের লোডশেডিং। তবে কোনো কিছুই দমাতে পারেনি তাঁর বড় মেয়ে রিনা আক্তারকে। সব বাধা কাটিয়ে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে প্রথম নারী ফ্রিল্যান্সার হয়ে উঠেছেন তিনি।
রিনাদের বাড়ি লোহাগাড়ার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুখছড়ি গ্রামে। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর চেষ্টায় পরিবারের হাল ধরার পাশাপাশি গ্রামের মেয়েদের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন তিনি।
শুরুটা সহজ ছিল না জানালেন রিনা। ২০১৭ সালে লোহাগাড়ায় বাংলাদেশ সরকারের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্প শুরু হয়। তরুণদের সেখানে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছিল। সেখানে ছয় মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ নেন রিনা। তখন চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজের হিসাববিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তিনি। টিউশনি করেই নিজের ও ছোট তিন বোনের পড়াশোনার খরচ চালাতেন। ২০১৯ সালে লোহাগাড়ায় আরাফাত আইটি ইনস্টিটিউট থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং ও গ্রাফিক ডিজাইনের ওপর আরেকটি বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন রিনা। বন্ধুর কাছ থেকে ধার নিয়ে ওই প্রশিক্ষণের কোর্স ফির পাঁচ হাজার টাকা পরিশোধ করেন সে সময়।
২০২১সালের ডিসেম্বরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান থেকে আসে তাঁর ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের প্রথম কাজ। এক ব্যবসায়ীর বিজনেস কার্ড ডিজাইন করে ১৫ মার্কিন ডলার আয় করেন রিনা। পরের মাসে পাকিস্তানের একজনের কার্ড ডিজাইন করেন। এবার আয় ২৫ মার্কিন ডলার। আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাঁকে। আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে। এখন ঘরে বসেই মাসে আয় করছেন গড়ে ১৫ হাজার টাকা। কোনো কোনো মাসে এর বেশিও হয়।
আরাফাত আইটি ইনস্টিটিউটের পরিচালক আরাফাত হোসেন বলেন, রিনা এখন আইটি খাতে দক্ষ ও সফল একজন নারী। তাঁর অনুপ্রেরণায় আরও ১৫ নারী আমাদের প্রতিষ্ঠানে ফ্রিল্যান্সিং শিখছেন। রিনার কাজের পরিধি ও আয় বাড়ছে ক্রমে।
এর মধ্যে স্নাতক শেষ হলেও স্নাতকোত্তর করা হয়নি। তাই স্নাতকোত্তর করায়ও মনোযোগ দিতে চান।
রিনা বলেন, আমার বাবা সব সময় উৎসাহ ও সাহস দিয়ে পাশে থেকেছেন।
নারীদের জন্য এটি একটি আদর্শ পেশা। শিক্ষিত বেকার তরুণীরা ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসেই রেমিট্যান্স আয় করে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারেন। তবে এর জন্য সহযোগিতা প্রয়োজন।
রিনা আক্তার বলেন, 'আমার ল্যাপটপ ছিল না। ফলে প্রশিক্ষণ নিয়েও কিছু করতে পারিনি।
তখন লোহাগাড়া উপজেলার বন্ধু আরাফাত হোসেনের প্রতিষ্ঠান থেকে বাকিতে ল্যাপটপ কিনি।
এরপর অনলাইনে কাজ খুঁজতে থাকি। এভাবে কেটে যায় দেড় বছর। কিন্তু কোনো কাজ পাচ্ছিলাম না।
তবে আমি হাল ছাড়িনি। অবশেষে প্রায় ৫০০ডলারের মত কাজ পাই। আলহামদুল্লিাহ এখন নিয়মিত কাজ পাই।
এখন আমি নিজেই প্রশিক্ষণ দিচ্ছি গ্রামের অনেক শিক্ষিত বেকার নারী ও স্বামী পরিত্যাক্তা বা নিগৃহীতা নারীদের তারাও সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছে।