৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯… শনিবার সকাল সকাল আমরা বেরিয়ে পড়লাম…
উদ্দেশ্য ঢাকার কাছাকাছি কোথাও থেকে ঘুরে আসা। দিনে গিয়ে দিনেই ফেরত আসবো। তিনটি মোটরসাইকেলে আমরা চারজন।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমরা পৌঁছে গেলাম নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁয়ে। সেখানেই সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। এরপর ১০ টার আগেই পৌঁছে গেলাম পানাম সিটিতে।
আবহাওয়া ছিল আমাদের অনুকূলে। একটু মেঘলা কিন্তু বৃষ্টি নেই। পানাম সিটিতে ঘুরতে ঘুরতে আমরা যেন টাইম ট্রাভেলের স্বাদ পাচ্ছিলাম। পুরোনো আমলের সব বাড়ি, তবে ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভেতরে ঢোকা যায় না।
রাস্তার দুপাশে রয়েছে ৫২টি বাড়ি। ইউরোপীয় এবং মোঘল স্থাপত্য সংস্কৃতির মিশ্রণ দেখা যায় এসব বাড়ির নকশায়। বাংলার বারো ভূঁইয়াদের স্মৃতি বহন করে চলছে এই পানাম নগর।
প্রাচীণ নগরী সুবর্ণগ্রাম ছিল বাংলার অন্যতম রাজধানী ও নদী বন্দর। প্রাচীণ এবং সুবর্ণগ্রাম-ই আজকের সোনারগাঁ। তের শতকে সুবর্ণগ্রামে স্থানীয় হিন্দু রাজা দনুজমাধব দশরথদেব তাঁর শাসনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলায় মুসলিম শাসকরা আসার পর থেকে ১৬১০ সালের আগ পর্যন্ত সোনারগাঁ ছিল স্বাধীন সুলতানি বাংলার অন্যতম রাজধানী ও প্রশাসনিক কেন্দ্র।
ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকে ধনাঢ্য হিন্দু ব্যবসায়ীরা পানাম নগরের গোড়াপত্তন করেন।
একটু ঘুরে ফিরে দেখলে দেখবেন প্রতিটি বাড়ির সাথে উঠোন, উপসনা ঘর, রান্নাঘর রয়েছে, প্রশস্ত উঠোন। বাড়িগুলোর বেশিরভাগই দোতলা।
আমরা হালকা পাতলা খাওয়া দাওয়া করে নিলাম।
পানামের ভেতরে বাঁশ, বেত ও কাঠের তৈরি নানারকম ঘর সাজানোর সামগ্রীর পশরা দেখতে পাবেন।
পানাম ঘোরা শেষে আরেকটু এগিয়ে আমরা চলে গেলাম বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন-এ। ভেতরে ঢুকতেই পুরোনো স্থাপত্যশৈলীর বড় সর্দারবাড়ি দেখে মুগ্ধ হবেন যে কেউ। যদিও রোববার ও সোমবার ছাড়া বড় সর্দারবাড়ির ভেতরে ঢোকা যায় না। তাই বাইরে থেকেই দেখতে হলো। পুকুরঘাটে বসে ঝিরিঝিরি বাতাস আর বৃষ্টিতে মনটাই যেন ভিজে গেল!
যাদুঘরের ভেতরে বিশাল জায়গা। সামনের রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের আবক্ষ ভাস্কর্য। হেঁটে ঘুরে বেড়াতে পারেন ভেতরে, রয়েছে লাইব্রেরি এবং যাদুঘর।
নৌকা ভাড়া করে ঘুরে বেড়াতে পারেন লেকেও। আধা ঘণ্টার জন্য ভাড়া পড়বে ২০০ টাকা, মাঝিকে দিতে হবে ১০০ টাকা। নৌকাঘাটেই মাঝি ঠিক করে নিতে পারবেন।
আগেই বলেছি, পরিবেশ ছিল আমাদের অনুকূলে। লেকের ঘুরে বেড়ানোর সময় ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ছিল। শরতের ছেড়া মেঘের আকাশ, চারপাশের সবুজ গাছপালা নদীর পানিতে ছায়া ফেলেছিল এবং দারুন সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল।
ভেতরে দেখা পেলাম এক অন্ধ বাউলের।
কয়েক ঘণ্টা সময় কাটিয়ে বিকেলের দিকে আমরা রওনা দিলাম ঢাকার দিকে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে শনির আখড়ায় উপস্থিত আমরা। সেখানেই ভরপেট দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে আবার ঢাকায় ফেরা।
কালো ধোঁয়া আর যানজট যেন ঢাকায় স্বাগত জানালো আমাদের।