১৯৭৯ সালের ২৪ জুলাই জাপানের 'নিউ টোকিও আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে উড্ডয়ন করে একটানা ১০ ঘন্টার ভমন শেষে প্রশান্ত মহা সাগর পারি দিয়ে লস্ এন্জেলস আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরন করলাম। সেই স্বপ্নের আমেরিকা, যা আমার “Join the Navy see the world” এর একটি অধ্যায়ের শুরু।
বিমান বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে যখন বের হয়ে এলাম তখনই ঘটল এক বিপত্তি। হঠাৎ একজন সুন্দরী যুবতী এসে আমার সামনে হাজির, বয়স ২০/২২ হবে। আগেই বলেছি, আমি একজন গ্রামের ছেলে এবং নৌ বাহিনীতে যোগদানের পূর্বে কখনও ঢাকা শহরেও যাই নাই, যদিও আমার বাড়ী ঢাকার অদুরে সাভারে। সেই পারাগাঁয়ের ছেলের সামনে আমেরিকার রাস্তায় একজন সুন্দরী যুবতী, অযাচিত ভাবে আমার সাথে কথা শুরু করে।
আমার ব্লেজারের পকেটে একটা লাল গোলাপ গুজে দিয়ে আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠল।
মেয়ে- তুমি খুব সুন্দর, খুব স্মার্ট, তোমার পোষাকটাও খুব সুন্দর, তোমাকে খুব হ্যান্ডসাম লাগছে!!
আমি- মুটামুটি ভয় পেয়ে গলাম, আমার বন্ধুরা এরই মধ্যে প্রায় ২০ গজ দূরে চলে গেছে। রললাম “তুমি কি চাও”?
সেয়ে- না, বিছু না, তোমার সাথে আলাপ করিতেছি।
আমি- “না, আমার আলাপ বরার সময় নাই, আমাকে যেতে দাও”। এই কথা বলে পাশ কাটিয়ে হাটতে থাকলাম।
কিন্তু না, সে নাছুরবান্দা। আমার পাশাপাশি হাটতে হাটতে অনবরত আমার প্রশংসা করতে থাকল।
শেষ পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলে ফেললাম, “আমার পিছু ছেড়ে অন্য কারও পিছু ধর”।
আমার কথা শুনে তার চেহারা যেন শ্রাবনের ঘন কাল মেঘের ছায়ায় মলিন হয়ে গেল!
“তোমাকে বিরক্ত করার জন্য দু:খিত” এই বলে সে আমার পিছু ছাড়ল।
বাঁকা চোখে তাকিয়ে দেখলাম- সেখানে দাঁড়িয়ে সে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ইতিমধ্যে লস্ এন্জেলস্ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে আভ্যন্তরিন বিমান বন্দরে পৌছে গেছি।
বন্ধুরা আমাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতে লাগল। পরবর্তী যাত্রার অপেক্ষায় অপেক্ষাগারে বসে আমার স্বপ্ন কিভাবে বাস্তবে রুপ নিচ্ছে তাই ভাবতে থাকলাম।