জীবনের খুব সুন্দর কিছু সকালের মধ্যে এইটা একটা ছিলো।
আগেই বলেছি কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার জন্য সিএনজি, মাইক্রো, বা হুন্ডা হলে আপনি মেরিন ড্রাইভ দিয়ে যেতে পারবেন। মামার সাথে আলাপ করে রাতেই উনি বলল উনার অফিসিয়াল কাজ আছে কাল টেকনাফ, তাই আমাদের জন্য খুব ভোরে বের হয়ে মটর সাইকেল দিয়েই ঘাট অব্দি পৌঁছে দিবে।
ওর সাথে আলাপ করে বললাম ঠিক আছে তাই হবে।
সকালে বের হওয়ার আগে আবার জিজ্ঞেস করলাম ঠান্ডায় সমস্যা হবে কিনা…? বলল সিএনজিতে ও একই বাতাস, তার চেয়ে এইটাই ভালো, দেখতে দেখতে যাবো, যখন যেখানে ইচ্ছে দাঁড়াবো, এডভেঞ্চার হবে।
ভোরে বের হওয়ার আগেই ডেডিকেটেড মামা নিচে এসে হাজির। কিন্তু কষ্ট বেশি হল মামার কারণ ব্যাগটা উনার সামনে নিতে হলো। আমরা দুইজন নাক কান বন্ধ করে বাইকের পেছনে বসে রওনা দিলাম মেরিন ড্রাইভে।
আহ্ মেরিন ড্রাইভ…
এ এমন এক রাস্তা যার সৌন্দর্যের বর্ণনা লিখে বোঝানোর মত না। পুরো রাস্তায় যাওয়ার সময় বাম পাশে পাহাড় আর ডান পাশে সমুদ্র। সূর্যটা পাহাড়ের ওই পাশে উঁকি দিচ্ছে মাত্র শুরুতে হাতে পায়ে কিছুটা ঠান্ডা লাগছিল।
প্রথম বিরতি দিলাম ফাইভ স্টার হোটেল রয়েল টিউলিপের সামনে। সময় নষ্ট না করে চা খেয়ে রওনা দিলাম। পুরো রাস্তা জুড়ে শুধু মুগ্ধতা টেকনাফের এই পাহাড় সারিগুলো সম্পর্কে ধারণা ছিল না এতোদিন। সীতাকুন্ড বা বান্দরবানের মত নয় কিছুটা পার্থক্য আছে। সমুদ্রের কাছাকাছি বলেই হয়তো।
যতই সামনে যাচ্ছি আর দেখছি। হঠাৎ ভাবলাম আমি কোনটা কে বেশি ভালোবাসি পাহাড়…? নাকি সমুদ্র…?
দুজন মানুষকে সামনে রেখে যেমন বলা যায় না আমি একে বেশি ভালোবাসি, ঠিক তেমনি তখন ও আমি বলতে পারিনি কাকে বেশি ভালোবাসি। দুটোই এতো ভালো লাগছিলো।
পাহাড়ের ওই পাশের সূর্য তখন উঠে গেছে শীত ভাব অনেকখানি কমে গেছে। কিছু চেকপোস্ট পড়লো, শুধু একটাতে জিজ্ঞাসা করলো আর পরিচয় পত্র দেখতে চাইলো। এর মাঝে মামা বলল মেরিন ড্রাইভ প্রায় শেষের পথে। চিন্তা করলাম এতদূর একটা পথ কোনো কষ্ট ছাড়া এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল…!
আল্লাহ এতো সুন্দর করে দুনিয়া বানিয়েছেন, না দেখলে বুঝতাম কী করে…?
টেকনাফের দিকে ঢোকার আগে দাঁড়ালাম রাস্তার পাশে, দেখলাম সাগরে জেলেরা জাল টেনে তুলছে।
সাগর যেমন বিশাল এদের জালগুলো তেমনই বড়সড়। এরপর টেকনাফ শহরে গিয়ে ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ দেখালো মামা। চট করে দেখে জাহাজ ঘাটের দিকে রওনা দিলাম।
ঘাটের একটু আগে পাহাড়ের উঁচু মাথাটা থেকে নাফ নদীর শুভ্র সকাল দেখে থমকে গেলাম। নদীর ওই পাশে মিয়ানমার এর পাহাড়, এই পাশে বাংলাদেশের। মাঝখানে নাফ নদী যেন দ্বিখণ্ডিত করেছে। এখান থেকে পুরোটা নদী আর পাহাড়ের ভিউ এত সুন্দর দেখা যাচ্ছে যে, জাহাজের তাড়া না থাকলে অনেকক্ষণ বসে থাকতাম। বাসে করে আসলে আপনি এই ভিউ পাবেন না, দাঁড়িয়ে দেখাতো দূরের কথা। কারনএখানে আসার আগে ঘাটেই নামিয়ে দিবে ঢাকা বা কক্সবাজার থেকে আসার সময়।
এর পর ঘাটে গিয়ে অনলাইন কপি দেখিয়ে টিকিট নিয়ে নাস্তা খাওয়ার বেশি সময় পেলাম না। নাস্তা পার্সেল নিয়ে জাহাজে উঠে গেলাম মামাকে বিদায় দিয়ে।
মুগ্ধতা যেন পিছু ছাড়ছে না আজ। দুইজন ই বাকরুদ্ধ…
আরো পড়তে পারেন আমার আগের সিরিজগুলি।
My-Honeymoon-diary-Day-1 2nd part
My-Honeymoon-diary-at-Cox-s-bazaar-Saintmartin-Day-1-first part