অপরুপ সৌন্দর্যের দেশ মালদ্বীপ। ভারত মহাসাগরের বুকে প্রায় ১২০০ প্রবাল দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে এই দেশটি। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাকৃতিক দ্বীপকুঞ্জ,ঘন নীল এবং স্ফটিক স্বচ্ছ পানি আর সাদা বালির সৈকত দুনিয়াজুড়ে মানুষকে মুগ্ধ করে আসছে যুগ যুগ ধরে। মালদ্বীপের শান্ত-মনোরম পরিবেশই পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা মালদ্বীপের সবগুলো দ্বীপের চারদিকে ঘিরে আছে সাগরের অফুরন্ত জলরাশি।
Arrival jetty of Fihalhohi island resort, Maldives. Captured by me
বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৯০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মালদ্বীপ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা মাত্র এক দশমিক পাঁচমিটার। দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে নিচু ও সমতল দেশ হিসেবে পরিচিত।
on the way to Maldives। Maldivian Airlines.
আমরা কোভিড-১৯ এর শেষদিকে মালদ্বীপ ভ্রমণে যাই। তখন অন্য দেশের তুলনায় মালদ্বীপ ভ্রমণে বিধিনিষেধ কম ছিলো।মালদিভিয়ান, শ্রীলকান এয়ার আর ইউএস বাংলা ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে মালে এয়ারপোর্টে কয়েকটি ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। আমরা মালদ্বিবিয়ান এয়ারে যাতায়াত করি।
Bar Deck of Fihalhohi island resort, Maldives. Captured by me
আপনারা হয়তো জানেন, মালদ্বীপ ভ্রমণে বাংলাদেশীদের জন্য কোনো ভিসা লাগে না। রিটার্ন এয়ার টিকেট, কনফার্ম হোটেলবুকিং এবং কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে মালে এয়ারপোর্টে পৌঁছালে ৩০দিন মেয়াদের অন-এরাইভাল ভিসা পাওয়া যায়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বলতে ফুল ডোজ ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট এবং ইমুগা কোড। ইমুগা কোড মানে মালদ্বীপ ইমিগ্রেশনসার্ভিসের অনলাইন প্লাটফর্ম ইমুগা থেকে একটি কিউ আর কোড জেনারেট করে নিতে হয়। আমরাও ইমিগ্রেশনে এসব ডকুমেন্টস দেখানোর পরে কোনো ঝামেলা ছাড়া ৩০দিনের ভিসা পেয়ে যাই।
Palm Groove restaurant, fihalhohi resort. Captured by me
এয়ারপোর্টের এক্সিট গেইটে দেখা মিলবে বিভিন্ন আইল্যান্ডের হোটেল ও রিসোর্টের ছোট ছোট বুথ। আমরা আমাদের আগে থেকে বুকিং করা রিসোর্টের বুথ খুঁজে নেই। আমাদের রিসোর্টের নাম ছিলো ‘ফিহালহোহি আইল্যান্ড রিসোর্ট’। তারা আমাদের রিসিভ করে লাগেজসহ সবকিছু বুঝে নেয়।
এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে সামনে চক্ষু শীতলকারী সাগরের স্বচ্ছ জলরাশি। এসব দেখে ভ্রমণের সব ক্লান্তি নিমেষেই দূর।নীলসাগর থেকে আসা মিষ্টি হাওয়া শরীর–মনকে করে তোলে প্রাণবন্ত। এয়ারপোর্টও একটি দ্বীপের মতো। এটি মালে দ্বীপ আর হুলহুমালে দ্বীপের মাঝে অবস্থিত। মালে দেশটির রাজধানী। এজন্য মালদ্বীপ অনেকের কাছে একটি আজব দেশ। কারণ এইদেশে এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে গাড়ির পরিবর্তে স্পীডবোডে উঠতে হয়। আমরাও রিসোর্টের নিজস্ব স্পীডবোডে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে একসময় পৌঁছে যাই আমাদের গন্তব্যে।
Water villa, fihalhohi island resort. Captured by me
মালদ্বীপে দুইধরনের আইল্যান্ড আছে: পাবলিক আইল্যান্ড আর প্রাইভেট আইল্যান্ড। পাবলিক আইল্যান্ডগুলোতে হোটেল-মোটেল এর পাশাপাশি স্থানীয়রাও বসবাস করে থাকে। আমাদের কক্সবাজারের মতো। এজন্য কিছু বিধিনিষেধ আছে, পোষাক পরিধানে ও এলকোহল সেবনে। দেশটি শতভাগ মুসলিমের দেশ। এর মুদ্রার নাম ‘রুপিয়া’। অবশ্য রিসোর্টগুলোতে ডলার হিসেবেই কেনাকাটা ও লেনদেন করা হয়।
Beach Hut, fihalhohi island resort. Captured by me
প্রাইভেটগুলো মালিকানাধীন। এগুলোর পুরো দ্বীপজুড়ে রিসোর্ট। ট্যুরিস্ট ছাড়া স্থানীয় কারো বসবাস নাই এখানে। ট্যুরিস্টদেরজন্য তেমন কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এগুলো তুলনামূলক অনেক বেশি ব্যয়বহুল।
Fihalhohi island resort, Maldives. Captured by me
অন্যান্য সব রিসোর্টের মতো ফিহালহোহিতেও ওয়াটার ভিলা, বার, স্পা ও ডাইভ সেন্টার রয়েছে। স্নোর্কেলিং করারও ব্যবস্থা আছে। এখানকার রিসোর্টগুলোতে আমাদের দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধারাও অনেক। তারা আমাদেরকে পেয়ে বেশ উৎফুল্ল হয়েছে।কেমন যেন-আমরা তাদের রক্ত সম্পর্কের কেও। আমরাও তাদের যথেষ্ট রেসপেক্ট করার চেষ্টা করেছি।
at beach hut, fihalhohi island resort
কোভিড এর বিধিনিষেধ এর কারণে এক আইল্যান্ড থেকে অন্য আইল্যান্ডে যাওয়ার সুযোগ ছিলো না, তাই আমরা সেখানেই একসপ্তাহ অবস্থান করি।
আমাদের প্যাকেজের সাথে তিনবেলা খাবার, এয়ারপোর্ট থেকে রিসোর্ট-রিসোর্ট থেকে এয়ারপোর্ট ট্রান্সফরমেশন বাই স্পীডবোড ইনক্লুডেড ছিলো।
আমাদের ট্যুরের যাবতীয় সব কার্যক্রম গাইড করেছে ‘ট্রাভেল আর্কিটেক্ট’ নামের একটি এজেন্সি।
ঢাকা থেকে মালে বিমান ভাড়া আনুমানিক ৫০-৫৫ হাজার টাকা। এক-দেড় মাস আগে টিকিট করা ভালো। শ্রীলনকান এয়ারেগেলে ট্রানজিট ফ্লাইটে আরো কম পড়বে। আর এসব রিসোর্টে প্রতিদিনকার খরচ ২০-২৫ হাজার থেকে শুরু। পাবলিকআইল্যান্ড যেমন. মাফুশি, হুলহুমালে এসব জায়গায় তুলনামূলক অনেক কম খরচে থাকা যাবে। আর বিমানে জানালার পাশেসিট নিলে উপর থেকে হাজারো দ্বীপের দেশ মালদ্বীপকে একনজরে দেখা যাবে-যা দেখে মনে হতে পারে, পৃথিবীর বুকে এক টুকরোস্বর্গ।
Beach hut, fihalhohi island resort. captured by me.
সংক্ষেপে টুকরো টুকরো স্মৃতি উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি। ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
বাংলাদেশ লোকাল গাইডস কন্টেস্ট আয়োজন না করলে হয়তো এসব কখনো লেখা হতো না। বিডিএলজি কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক মুবারকবাদ।
#bdlgwritingcontest #200meetup #bdlg200









