কাতারে এখন চলছে বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট। এবারে ৩২ টি দেশ অংশ গ্রহণ করছে। অংশ গ্রহণকারী দেশগুলো ছাড়াও পৃথিবীর প্রতিটি ফুটবল প্রেমীদের চোখ এখন কাতারে। কে আজকের ম্যাচে জয়লাভ করবে, কে সেরা খেলোয়াড় হবে, কারা ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হবে এই সব নিয়ে চলছে আলোচনা।
আমরা ফুটবল খেলা খুব একটা ভালো খেলতে পারেনা। বিশ্ব রেঙ্কিং এ আমাদের অবস্থান একদম তলানির দিকে। কিন্তু ফুটবল খেলার দর্শক হিসাবে আমরা নাম্বার ওয়ান। আমাদের মতো ফুটবল পাগল জাতি পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
দেশের প্রায় ১৭০ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে পাঁচ বছর+ বয়সী সবাই কম বেশি কোননা কোনো ফুটবল টিমের সমর্থক। এর মধ্যে প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ % লোক আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের সমর্থক। বাকিরা জার্মানি, ফ্রাঞ্চ, স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি এবং অন্যান্য দেশের সমর্থক।
রাতে ছিল হাইভোল্টেজ ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার ম্যাচ। তাই শহরের চিত্র দেখার জন্য বের হয়েছিলাম। সেই দিনের আমার কিছু অভিজ্ঞতা আজ আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো।
আমি এবং আমার বন্ধু রাস্তা পার হচ্ছিলাম। খুব স্পিডে এক মোটর বাইক আসছিলো। তাই আমরা দাঁড়িয়ে যাই। কিন্তু আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে বাইক থেমে যায়। বাইক চালক আমাদেরকে সেলুট করে এবং শুভেচ্ছা জানায়। কারণ আমার বন্ধু এবং বাইক চালক দুজনেই আর্জেন্টিনার জার্সি পরে ছিল।
এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়ির ছাদে, রাস্তায় মানুষ তার পছন্দের দলের পতাকা টানিয়ে দিয়েছে। কেউ কেউ নিজের নামে পছন্দের দলের রঙিন ব্যানার বানিয়েছে। হটাৎ ভীনদেশী কেউ এলে মনে করবে এ যেন আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের কোনো কলোনি। এক পাগল ফ্যান দেখলাম আর্জেন্টিনার পতাকার কালার দিয়ে নিজের রিক্সা রঙিন করেছে। উনার রিক্সায় আর্জেন্টিনার জার্সি পরে কেউ উঠলে ভাড়া ১০ টাকা কম নিচ্ছে।
এলাকার প্রতিটি কফি শপ, চায়ের দোকানে লোকজন আড্ডা দিচ্ছে আর রাতের ম্যাচ নিয়ে আলোচনা করছে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলের পতাকা শোভা পাচ্ছে। কিছু ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির শোরুমে বিশ্বকাপ উপলক্ষে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টিভিতে ডিসকাউন্ট চলছে।
শপিং মল, মার্কেট, ফুটপাথের দোকানে বিভিন্ন দেশের জার্সি বিক্রি করা হচ্ছে। অনেকেই পছন্দের দলের জার্সি কিনছে। একজন এসেছে পরিবারের সবার জন্য আর্জেন্টিনার জার্সি কিনতে। কেউ কেউ জার্সি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একই দলের সমর্থক হলে শুভেচ্ছা বিনিময় করছে।
অনেক জায়গায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে বড় পর্দায় খেলা দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাতে এমন এক মাঠে কয়েক হাজার লোকের সাথে আমি ব্রাজিল এবং ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচ দেখলাম। এক সাথে এতো লোকের মাঝে খেলা দেখার মজাই আলাদা। এখানে সবাই মিলে ডিনার করার জন্য কয়েকটি বড় পাতিলে বিরানি রান্না করা হয়েছে।
ফুটবল নিয়ে আমাদের দেশের মানুষের এই পাগলামি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় স্থান পাচ্ছে। আমি মনে করি ফুটবল নিয়ে এই পাগলামি একদিন আমাদের অনেক দূর নিয়ে যাবে। একদিন হয়তো আমরাও বিশ্বকাপ ফুটবলের মূল টুর্নামেন্টে খেলতে পারবো।
#bdlgwritingcontest #bdlg200 #200meetup