Caption : ঝর্নার গুহায় ধ্যানমগ্ন আমি।
যারা ট্রেক করতে পারেন বা ভালবাসেন,সে সকল ঝর্ণা-প্রেমীদের জন্য বিলাইছড়ি রাঙামাটি একটা আদর্শ রুট লেক পাহাড় ঝর্না সবই পাবেন এ রুটে একদম প্রকৃতি র প্যাকেজ বলা যায়। কাপ্তাই লেকের তাজা মাছ এর স্বাদ আপনার ভ্রমন এর আনন্দ কে বহুগুন বাড়িয়ে দিবে। তবে আমার এবারের পর্বে মুলত ধুপ্পানি ঝর্না কে নিয়েই।
Caption: চলতি পথে পাহাড়ি এক গ্রাম।
আমরা,বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় ঢাকা থেকে কাপ্তাই এর সরাসরি বাসে উঠে পরি যাতে শুক্রবার সকাল ৮.৩০ টায় কাপ্তাই হতে বিলাইছড়ির লোকাল বোট ধরতে পারি। কারন এর পরের লোকাল বোট ১০:৩০ টায়। আপনি চাইলে রিজার্ভ বোটও নিতে পারেন ।
ভোরে কাপ্তাই পৌছে সকালের নাস্তা করে শনিবার রাত ৮:৩০ টার ফিরতি টিকেট অবশ্যই করে নিবেন। কারন কাপ্তাই থেকে এটাই ঢাকার শেষ বাস। এবার রওনা হবেন বিলাইছড়ির উদ্দ্যেশ্যে প্রায় ২ঘন্টার এই বোট জার্নিতে, কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য আপনার রাতের বাস-জার্নিকে অনেকটাই ভুলিয়ে দিবে। পথে আর্মির প্রথম চেকপোস্ট পড়বে। সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। বিলাইছড়ি বাজারে থাকার অনেক হোটেল আছে তবে আমরা দিঘলছিড়ি তে শান্ত স্যারের কটেজে থাকি দারুন একটা ভিউ প্লাস অত্যন্ত আন্তরিক শান্ত স্যার উনি উখানকার এক স্কুলের টিচার। প্রতি রুম ১০০০/১২০০ টাকা শেয়ার বেসিসে প্রায় ৮/১০ জন থাকতে পারবেন। তবে শুনেছি শান্ত স্যার আর এখন কোন সার্ভিসই দিচ্ছেন নাহ।
Captionঃ ধুপ্পানির পথে প্রকৃতি র আলিঙ্গনে।
এরপরে দুইদিনের জন্য বোট ঠিক করে নিবেন। ২দিনের ৪টা ঝর্নার জন্য বোট ভাড়া কঅরে নিবেন।অথবা সেই ট্রলারেই কাপ্তাই ফিরতে পারেন সেইভাবেই ভাড়া ঠিক করে নিবেন। অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন।
হোটেলে উঠে১৫-২০ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে বোটে উঠে পরবেন। দুপুরের খাবার টা আমরা ফিরে এসেই খেয়েছি কাপ্তাই লেকের তাজা মাছ সে এক সুস্বাদু এখনো জিভে স্বাদ লেগে আছে। প্রায় সাড়ে তিন কেজি উজনের তেলাপিয়া মাছ আইড় মাছ ও ছিলো আর উনি খুব আন্তরিক শেষ বেলায় তো সবাইকে দুই পিছ করে মাছ খায়িয়েছে কিন্ত বিল সেই ১২০টাকাই। উনার ভাষ্য মাছ কিনেছি আপনাদের জন্য আপনারাই তো খাবেন।আর রান্না উনার ওয়াইফ করেছিলো দারুন রান্না।
Captionঃ এরকম ডিঙ্গি নৌকতে প্রায় ২০ মিনিটের পথ।
৩০ মিনিট পর ১১:৩০ টার দিকে মুপ্পোছড়া ট্রেইলের মাথায় (বাঙ্গালকাটা) পৌছে যাবেন। মাঝিকে বলে রাখলে মাঝিই গাইড ঠিক করে রাখবে (৫০০ টাকা-Fixed)। প্রায় ১:৩০ ঘণ্টা ট্রেকিং-এর পর মুপ্পোছড়া পৌছাবেন। পথে ৫/৬ টা ছোট ছোট ঝর্ণা দেখতে পাবেন। ন’কাটা ঝর্ণার মুখ পাহাড় ধসের কারনে ভেঙ্গে গেছে, তাই আমাদের মত মুখ দেখতে গিয়ে সময় নষ্ট করবেন না। প্রায় ১ ঘণ্টা ঝর্ণার সৌন্দর্য দেখে (পড়ুন পানিতে দাপাদাপি করে) নৌকায় চলে আসবেন। নৌকা থেকে নেমে আরও প্রায় ১:৩০ ঘণ্টার মত হাটলে আপনি গাছকাটা ঝর্ণা দেখতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোন গাইড লাগবে না কারন মাঝিই নিয়ে যাবে, ঐভাবেই কথা বলে নিবেন। এভাবেই প্রথম দিনের যাত্রা শেষ করে হোটেল এ ফিরবেন। রাতে খেয়ে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরবেন কারন পরের দিন ভোর ৫ টায় উঠতে হবে।।
caption : পাহাড় জুমঘর প্রকৃতি ভালোবাসা।
Captionঃ প্রায় ২/৩ ঘন্টা ট্রেক করে যখন ঝর্নাতে পৌছাই।
Captionঃ বন্ধুদের সাথে গ্রুপ ছবি।
এখানে বলে রাখি আপনি যদি সময়ের সদ্ব্যবহার না করেন তাহলে গাছকাটা ঝর্ণা দেখার সময় পাবেন না। এক্ষেত্রে বিকালে নৌকায় কাপ্তাই লেক ঘুরে সময় কাটাতে পারেন।।
শনিবার ভোর ৫টায় উঠে রেডি হয়ে ৫:৩০টার মধ্যে নৌকায় চলে যাবেন সকালের নাস্তা রাতেই অর্ডার দিয়ে রাখবেন। তারা ভোরে প্যাকেট করে রেখে দিবে। সাথে এক কলসি পানি নিয়ে নিবেন। প্রায় ২ ঘণ্টা পর উলুছড়ি পৌছে যাবেন। পথে আরও ২টা আর্মি চেকপোস্ট পড়বে।।
উলুছড়ি থেকে ছোট ডিঙি নৌকা নিতে হবে। প্রতি নৌকায় (৩০০টাকা) ৪/৫ জন বসতে পারে। সাথে গ্রুপ হিসেবে গাইড ৫০০ টাকা=) ২০ মিনিটের মত নৌকা জার্নি করে হাটা শুরু করতে হবে। পথে ২ টা পাহাড় পার করতে হবে। প্রায় ১.৪৫ ঘন্টার মতো অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে ধুপপানি পাড়ায় পৌঁছাবেন। এখানে একটা দোকান আছে সেখানে চাইলে হালকা কিছু খেয়ে নিবেন। এর পর সবচেয়ে রিস্কি একটা ঢাল পার করতে হবে। ২৫-৩০ মিনিট পর পৌছে যাবেন কাক্ষিত লক্ষ্য- ধূপপানি ঝর্ণায়। এর এক ঝলক আপনার ৪:৫০ ঘণ্টার জার্নিকে ৪.৫ সেকেন্ড ভুলিয়ে দিবে। এত বাতাস ছিল যে ব্যালেন্স রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। ১০০ ফুটেরও বেশি উচ্চতার এই ঝর্ণার পানি নিচে পরতে পরতে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ধোয়ার সৃষ্টি করে। এই জন্যই এর নামকরণ করা হয়েছে ধূপপানি ঝর্ণা। চারপাশ মোটামুটি আবদ্ধ থাকায় বাতাসে পানির কণা এত থাকে যে, আপনি কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বের করতে পারবেন না- যদি না সেটা ওয়াটার প্রুফ হয়।।
এখানে প্রায় ১ ঘন্টার মত গোছল করার সময় পাবেন। ঝর্ণার একদম নিচে যেতে হলে অবশ্যই গাইডের সাহায্য নিবেন। কারন কয়েক জায়গায় প্রায় ৬ ফিট গর্ত আর পানির নিচে এলোমেলো বড় বড় পাথর আছে।।
১১ টার মধ্যে রওনা দিতে হবে। ফেরার পথে ধূপপানি মন্দির দেখে আসবেন। সর্বোচ্চ ১১:৩০ টায় মধ্যে আপনাকে ধূপপানির মায়া ত্যাগ করে ফিরতে হবে নতুবা বিলাইছড়ি থেকে ৪:৩০টায় ছেড়ে যাওয়া শেষ লোকাল বোট ধরতে পারবেন না।।
Captionঃ ফাইনালি আমরা ঝর্নাতে প্রচুর চিল করেছি।
**সতর্কতা:
১) আপনাকে অবশ্যই সময়ের সাথে চলতে হবে। কারন এখানের লোকাল বোট + রাঙ্গামাটি থেকে ফিরতি বাস( রাত ৮:৩০) Sharp time এ চলে।
২) এখানে Teletalk আর Robi ছাড়া অন্য কোন সিমের নেটওয়ার্ক থাকে না।
৩) ধুপপানি হচ্ছে এক বৌদ্ধ বিক্ষুর তীর্থ স্থান। তাই এখানে এসে চিল্লাপাল্লা ও উচ্চবাচ্য করবেন না।
**যা সাথে থাকতেই হবে:
১) ভোটার আইডি কার্ড (1st priority)
(অন্যথায় কলেজ/ভার্সিটি আই,ডি,কার্ড বা জন্মসনদ/পাসপোর্ট এর ফটোকপি)
২) যথেষ্ট পরিমান পলিথিন।
৩) পাহড়ি পিচ্ছিল ঝিরি ঝর্নায় ট্রেক করার উপোযুক্ত সেন্ডেল।
নৌকা বেশ বড় এবং মাঝি অত্যন্ত আন্তরিক ছিল। নিত্য দা খুব দারুন একজন মানুষ ভাড়া ঠিক করার পরেও উনাকে যা দিবে দ্বিমত করবে নাহ। আমরা ছোট গ্রুপ গিয়েছিলাম আগের দিন রাতে উনাকে ফোন দেই উনিই অন্য আরেকটা গ্রুপের সন্ধান দেন এ। **মাঝির মোবাইল নং:
01558121103 (নিত্য রঞ্জন)
আমরা বৃষ্টি পাইনি তাই ঝর্নাতেও পানি খুব কম ছিলো আর রোদের তেজ খুব তীব্র জিহ্বা প্রায় বের হয়ে যায় অবস্থা।।
ফিরতি সময় আমরা ৭ টার মধ্যেই কাপ্তাই পৌছে যাই কিছুক্ষন আশেপাশে ঘুরে ৭:৪৫ বাসে উঠে যাই।
#BDLG #BangladeshLocalguide #Travel #Localguideconnect #Letsguide