শালবনের ভিতরে তোলা একটি ছবি
প্রকৃতির সৌন্দর্যের লীলাভূমি উত্তরের সর্ববৃহৎ দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধর্মপুর শালবন। দেশের উত্তরে প্রাকৃতিক ও সৃজিত বেশ কয়েকটি বনাঞ্চল রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো দিনাজপুরের বিরল উপজেলার দক্ষিণে অবস্থিত ধর্মপুর ফরেস্ট দিনাজপুরের কয়েকটি বনভূমিগুলোর থেকে আয়তনে বড় এবং শাল গাছ সহ বিভিন্ন প্রকৃতির গাছপালা থাকায় ধর্মপুর বীট সারা দেশের মানুষের কাছে পরিচিত। এক সময়ে বাঘ, ভাল্লুক, নীল গাইসহ বিভিন্ন বন্য জীবজন্তুর অবাধ বিচরণ ছিল এখানে। এই গহীন অরণ্য তার ঐতিহ্য হারিয়েছে এখন।
একটি বাঁকা গাছের সৌন্দর্যের ছবি
এ বনের বিশেষত্ব হল ২১টি মৌজা জুড়ে ২৭৩০ একর এলাকা নিয়ে এ বনাঞ্চল। বনের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে পুরনো শালগাছ। বনবিড়াল, খেকশিয়াল, বিজিসহ পাখি রয়েছে ২০-২৫ প্রজাতির। বন এলাকার ভিতর দিয়ে যোগাযোগের জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি পাকা রাস্তা। এসব রাস্তা দিয়ে স্থানীয়সহ বহিরাগত লোকজন যাতায়াত করে থাকে। রাস্তাগুলো পরিপাটি এবং আঁকাবাঁকা। এ আঁকাবাঁকা পথ ধরে যতই বনের ভেতরে যাওয়া যায়, চোখে পড়ে সারি সারি শালগাছ।
গাছের সবুজ পাতার মনোরম দৃশ্যের ছবি
শালগাছের মাঝারি আকারের পাতাগুলো গাড় সবুজের সমারোহে অন্য রকম এক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। বনের মধ্যে হঠাৎ ডেকে ওঠে ঘুঘু পাখি। এ ডাক শুনে চমকে ওঠার কারণ নেই। কারণ ঘুঘু পাখি দীর্ঘ সুরে “ঘু-ঘুৎ, ঘু-ঘুৎ’’শব্দে হয়ত বনে আহত দর্শনার্থীদের অভিনন্দন জানায়। আবার বনের গাছের পাতা গুলো বাতাসে সারাক্ষণ ঝিক ঝিক করে অজানা সুর সৃষ্টি করে চলে সারাক্ষণ। বীটের মধ্যে বাঁশ ও বেতের গাছ রয়েছে। সবকিছু মিলে এক মোহনীয় রুপ দেখা পাওয়া যায় এই ধর্মপুর শালবনে।
এই সালবনের ২১ টি মৌজার মধ্যে একটি ধর্মপুর মৌজার ছবি।
ধর্মপুর বীটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যাওয়া ১০ কি:মি: দীর্ঘ নোনা নদী রয়েছে। যা সংস্কারের অভাবে নোনা নদী আর নদী বলে মনে হবে না। বনের মধ্যে রয়েছে ছোট বড় আকৃতির ৪৫ টি পুকুর। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি নতুন পুকুর খনন করা হয়েছে। এই ৪৫ টি পুকুরের মধ্যে কিছু পুকুর সংস্কার করলে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি খরা মৌসুমে জলাশয় গুলোর পানি দিয়ে বনের গাছ সেচ দেয়া সম্ভব হবে। সরকার ও বন বিভাগ এখানে বিভিন্ন ধরনের বন সৌন্দর্যের পদক্ষেপ নিলে যেমন পর্যটকদের জন্য বিনোদন কেন্দ্র ও শালবন উন্নয়নমূলক কাজ করলে পর্যটকদের আনাগোনা আরো বেড়ে যাবে।
আমি নিজেই আঁকাবাঁকা গাছের উপরে উঠে একটু মডেল হওয়ার চেষ্টা
বসন্তের আগমনে ঝরে যায় গাছের সব পাতা। আর পাতা কুড়ানিরা দল বেঁধে আসে পাতা কুঁড়ানোর জন্য। যদি আপনি কখনও জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশ করেন, তবে লোকের সমাগম দেখতে পাবেন। কিন্তু, অন্য সময়ে এত লোকজন দেখতে পাবেন না। একদম নির্জন, গুমোট পরিবেশ তৈরি হয়। বর্তমানে, পাতা কুঁড়ানোর জন্য দূর দূরান্ত থেকে লোক আসে। কেউ নিজের প্রয়োজনে আর কেউ বা আসে জীবিকা নির্বাহ করার জন্য। কারণ, এই শাল পাতা বিক্রি হয় ৬০-৮০ টাকা বস্তা দরে (শহরে)। সাইকেল, ভ্যান, ট্রাক ইত্যাদিতে করে বহন করে। এই শালবনের সাথে জড়িয়ে আছে স্থানীয় খেটে খাওয়া মানুষের অনেক স্মৃতি।
স্থানীয়রা ভ্যানে করে গাছেরপাতা বিক্রি করে সংসার চালায়।
কি ভাবে যাওয়া যায়
দিনাজপুর শহর থেকে আট কিলোমিটার পশ্চিমে বিরল উপজেলা। শহর থেকে অটো করে ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে আসতে হবে। আবার বিরল উপজেলা থেকে অটো ভাড়া করে ২০ টাকা দিয়ে সোজা দক্ষিণে আট কিলোমিটার ৮নং ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন কালিয়াগঞ্জ বাজারের পূর্ব পাশে ধর্মপুর শালবন। কালিয়াগঞ্জ বাজার থেকে পূর্ব পাশে গেলে ধর্মপুরের সেই শালবন চোখে পড়বে বাকি শালবন ঘুরতে গেলে আপনাকে ভ্যানে করে যেতে হবে।
ধর্মপুর শালবনের ম্যাপ লিংক:
https://maps.app.goo.gl/9JGoabZvYUyg5Uu39
#localguidesconnect #localguides #letsguide #bdlg #BDLG #Bangladesh