ঢাকার হেবাং (Dhaka's Hebaang)

হেবাং হল প্রথম মহিলা পরিচালিত পাহাড়ি খাবারের রেস্তোরাঁ। এটি চার বোন দ্বারা পরিচালিত হয়। রেস্তোরাঁটি খোলার আগে, হেবাং ২০১৬ সাল থেকে অনলাইনে অর্ডার গ্রহণ এবং পাহাড়ি খাবার সরবরাহ করে আসছিল।

‘হেবাং’—চাকমা ভাষায় যার অর্থ ভাপে রান্না করা খাবার। এ রান্নার একটি বৈশিষ্ট্যই হলো সেদ্ধ বা ভাপে রান্না। চাকমাদের রান্নার ধরন-ধারণ তো বাঙালি রান্নার থেকে অনেকটাই আলাদা। বাঙালিরা যেখানে তেল ছাড়া রান্নার কথা ভাবতেই পারে না, সেখানে চাকমারা এক রকম তেল ছাড়াই রান্নাবান্না করে। মসলার ব্যবহারেও আছে ব্যাপক পার্থক্য।

রাজধানীর মিরপুরের কাজীপাড়ার এ রেস্তোরাঁর নাম ‘হেবাং’। কাজীপাড়ার পদচারী–সেতুটির উত্তর দিকের একটি ভবনের তিনতলায় এর অবস্থান। কংক্রিটের ভবনেই রেস্তোরাঁটি। তবে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলে ভিন্ন পরিবেশ। প্রথমেই চোখ আটকাবে বাঁশ দিয়ে তৈরি ছোট ঘরে। দেয়ালের গায়েও বাঁশের নানা কারুকাজ। হেবাংয়ের ইন্টেরিয়র করা হয়েছে চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী ঘরবাড়ির আদলে। বাঁশের তৈরি চেয়ার-টেবিলে বসে খেতে খেতে মনে হতেই পারে, এটা বোধ হয় পার্বত্য চট্টগ্রামেরই কোনো একটা ঘর। সেখানে বসে খাওয়া যাবে নানা পদের চাকমা খাবার।

হেবাং নারী পরিচালিত প্রথম পাহাড়ি খাবারের রেস্তোরাঁ। চার বোন এর পরিচালনায় আছেন। রেস্তোরাঁ চালুর আগে ২০১৬ সাল থেকে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে পাহাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করত হেবাং। অনলাইনে সাড়া দেখেই এ রেস্তোরাঁ খোলা। ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর চালু হয় হেবাং।

জুমের বিন্নি চালের ভাতের সঙ্গে নানা পাহাড়ি তরকারির মিশ্রণ ‘পাজন’ও পাওয়া যায় নিত্যদিন। আছে শুঁটকির নানা আইটেম। ছোট শামুক বা শীতের সময়ে সেদ্ধ বাঁধাকপির সঙ্গে ঝালের মিশ্রণ। চাকমারা সব খাবারেই অনেক ঝাল দেয়। গরম গরম ভাত দিয়ে ঝাল ঝাল এসব তরকারি খেতে মজাও লাগে বেশ। হেবাংয়ে গেলে শুধু চাকমা তরকারিই নয়, ভাতের সঙ্গে খাওয়া যাবে নানা পদের ‘গুদেয়ি’ আর ‘হরবু’। ‘গুদেয়ি’ হলো চাকমাদের ভর্তা। আর ‘হরবু’ হলো সালাদ। ওরা প্রায় সব সালাদেই শুঁটকি ব্যবহার করে। দুপুর ও রাতের খাবারের বিভিন্ন পদের সঙ্গে আছে নানা পাহাড়ি পিঠা। বিন্নি চালের পিঠা, কলা পিঠা গরম-গরম পরিবেশিত হচ্ছে। আছে নানা ফলের জুস।

সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় অবশ্য বাঁশে পুড়ে রান্না করা মুরগি। এই খাবারটির চাকমা নাম ‘হরু গোরাম’। বোঝার সুবিধার জন্য অবশ্য মেন্যুতে এ খাবারটির নাম দেওয়া আছে ‘বেম্বু চিকেন’।

হেবাংয়ে ঝকঝকে পাত্রে রাখা খাবারের মধ্যে দেখা গেল হাঁস, বেলে মাছ, কাঁকড়ার নানা পদ। ব্রয়লার মুরগি আছে। তবে পাহাড়ের বনমোরগও পাওয়া যায়। বর্ষার দিনে বাঁশ কোড়ল দিয়ে তৈরি নানা পদ থাকে। কোড়লের মধ্যে মুরগির মাংস ঢুকিয়ে ‘বাচ্চুরিমালা’ তো বিখ্যাত।

তিন থেকে চার ধরনের চা আছে। এর মধ্যে তেঁতুল চা, পুদিনাপাতার চা, রোজেলা চা অন্যতম। পাহাড়ের জুমে হওয়া টক ফল আমিল্যার পাতা শুকিয়ে তৈরি রোজেলা চা নিজেদের আবিষ্কার।

জন্মদিন বা কোনো পার্টি করতে চাইলে দুপুরের জন্য বেলা ১১টার মধ্যে আর রাতের খাবারের জন্য বিকেল সাড়ে চারটার মধ্যে অর্ডার দিতে হবে। দুপুর সাড়ে ১২টায় হেবাং খোলে, চলে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত।

হেবাংয়ে শব্দযন্ত্রে ধীরলয়ে বাজে পাহাড়ি নানা ভাষার গান। বিভিন্ন দিবসে এখানে গানের আসরও বসে।

হেবাং-এর পরিচালক বিপলি চাকমা ২০২১ সালে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সর্বজয়া পুরস্কার, ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ‘আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক’ থেকে একজন অগ্রণী নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গুডউইল মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড এবং ‘বাংলাদেশ জৈব কৃষি নেটওয়ার্ক’ থেকে এক্সিকিউটর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।

Locations:
at Kazipara, Dhaka : https://maps.app.goo.gl/ACDGHNoSqTeb3ub27
at Mohammadpur, Dhaka : https://maps.app.goo.gl/aK3wdH2pgXE2UeuZ8

19 Likes

Hi @SanjayBDLG ,

We saw you requested for this post to be removed. However, we do not delete posts on the community. Posts might be moved to the archive forum if they do not adhere to our rules. We suggest you edit this post and use it for another topic you may want to share with the community.

1 Like

@SanjayBDLG ধন্যবাদ আপনাকে, আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। অনেক সুন্গুদর করে গুছিয়ে লিখেছেন :heart: :heart:

1 Like

@jakiripsc ধন্যবাদ ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য