ফটোগ্রাফির খুঁটিনাটি, ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি || Details of Photography, Landscape Photography
ল্যান্ড এর বাংলা শব্দ ভূমি। যেমন জলাভূমি, বরফ আবৃত ভূমি, গাছপালা যুক্ত ভূমি, মরুভূমি, এক কথায় খোলা দিগন্ত। তার মধ্যে আছে আকাশ, মেঘ, প্রতিচ্ছবি,জলপ্রপাত ইত্যাদি অর্থাৎ ঘরের বাইরের জগত।
সুতরাং আমাদের দৃষ্টি গ্রাহ্য ভূমিরূপের সৌন্দর্য যখন আমরা ক্যমেরা বন্দী করি তখনই তা হয়ে ওঠে ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি। কিন্তু এই ল্যণ্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির সৌন্দর্য নির্ভর করে কতগুলি কৌশল, নিয়মের উপর।
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের টানে মানুষ ছুটে যায় বিভিন্ন দিক, তার সেই অপরূপ নান্দনিক সৌন্দর্যকে মুঠো বন্দী করে ধরে রাখতে গিয়েই ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির জন্ম। যে ছবি গুলি তাকে ভবিষ্যতে অতীতের স্মৃতি গুলি জীবন্ত করে দেবে।
ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি প্রধানত মানুষের পছন্দের উপর নির্ভর করে। কেও কেউ ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি -র মধ্য মানুষের অল্প অস্তিত্ব পছন্দ করে, আবার কেউ কেউ শুধু মাত্র প্রকৃতিকেই পছন্দ করে। অনেকে আবার দুটোই পছন্দ করে। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা,ঘরে বাইরের জীবনযাত্রা,প্রকৃতির সাথে মানুষের যোগাযোগের মুহূর্ত, জলবায়ুর বৈচিত্র্য, ভিন্ন ভিন্ন ভূমিরূপের সৌন্দর্য আস্বাদন,প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শিল্পের বিভিন্নতা , শহর ও গ্রামাঞ্চলের পৃথকতা প্রভৃতি বেশ কত গুলি কারণে ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি করা হয়।
ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি -র বিষয় নির্বাচন :-
মানুষ সোন্দর্য পিপাসু। তার বিষয় নির্বচন করার ধরনও বিভিন্ন রকম। এই বিষয নির্বচনের বিভিন্নতা একটি দৃশ্যকে বিভিন্ন ভাবে মানব মনে উদ্ভাসিত হয়।
তবে সব দিক বিবেচান করে ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির বিষয় কে তিন (3) ভাগে ভাগ করা যায়, ক) প্রাকৃতিক, খ) মনুষ্যসৃষ্ট গ) কৃত্রিম।
ক) প্রাকৃতিক = ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি (Landscape photography)-র সাধারণত আমারা বুঝি দিনের বেলায় সূর্যালোক ও রাতের বেলায় চন্দ্রালোকের উপস্থিতিতে আকাশ , জমি, জল এর কাছ থেকে বা দূর থেকে যে সৌন্দর্যময়তা ক্যমেরা বন্দি করা হয় তা। প্রাকৃতিক আলোর বর্ণময় বৈচিত্র্য, ভূমি রূপের দৃষ্টি নন্দন সৌন্দর্য ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফিকে বৈচিত্রময় করে তোলে। এছাড়া বিভিন্ন জাবাযু যেমন গ্রীষ্মের দাবাদহ, শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ, বসন্তে বৃক্ষের সৌন্দর্যানুভূতি, বর্ষার বারিধারা প্রবহমান রূপ প্রভৃতি এই প্রাকৃতিক ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি -র বিষয়। বর্জপাত, আগ্নেয়গিরি লাভা নিঃসরণ, বন্যা , ভূমিকম্প প্রভৃতির ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ,এর মধ্যে পড়ে।
খ) মানব সৃষ্ট = ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফিতে এই রকম পরিবেশ সাধারণত কৃষিজমি, অরণ্য রোপণ, মানুষর বসতি, রাস্তাঘাট, পরিবহন ব্যবস্থা প্রভৃতির মধ্য দেখাযায়। মানুষ যখন চাষ করে তার একটা নির্দিষ্ট জ্যামিতিক কৌশল ব্যবহার করে, যখন বৃক্ষ রোপণ করে তার একটা নিদিষ্ট পদ্ধতি থাকে যা ফটোগ্রাফাররে ফটোগ্রাফিএর কৌশলের মাধ্যমে ক্যমেরায় গ্রহণ করে। মানব ইতিহাসে সুবিশাল নির্মাণ স্থাপত্য প্রভৃতি নান্দনিক দিক এই পর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এই রকম ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফিকে, মানব সৃষ্ট ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি বলে।
গ) কৃত্রিম = ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির এই করম দৃশ্য সৃষ্টি করা হয় স্টুডিওর ভিতর। অর্থাৎ আলো কৃত্রিম, গাছ কৃত্রিম, পাহাড় কৃত্রিম, এমন কি জলবায়ুও কৃত্রিম।
ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির প্রযুক্তিগত নিয়ম কানুন :
ক) এঙ্গেল অফ ভিউ = ল্যান্ডস্কেপ কতটা অংশ আমি বা আমরা ছবির মধ্যে রাখব তার পরিমাপ করা। এটি মূলত ক্যমরার লেন্স ও সেন্সার কর বড় তার উপর নির্ভর করে। ওয়াইড এঙ্গেল লেন্সে বেশি পরিমার ল্যাণ্ডস্কেপ পাওয়া সম্ভব তেমনি বিভিন্ন সাইজের সেন্সারে বিভিন্ন ফোকাল লেন্থ বিভিন্ন বিভিন্ন এঙ্গেল অফ ভিউ তৈরী করে। তেমনি ক্যমেরা আগে ও পিছনে নিয়ে গিয়েও এই এঙ্গেল অফ ভিউ বাড়ানো ও কমানো সম্ভব।
খ)আপাচার= আপাচার হল লেন্সের ভিতের দিয়ে আলোর সেন্সারে প্রবেশের পথ। এই পথ টিকে ছোট করে কম আলো প্রবেশ করানো হয় ও পথ টিকে বড় করে বেশী আলো প্রবেশ করানো হয়। তাই কম আলোতে লেন্সেকে বেশি বড় খুলতে হয় যদিও এর সীমাবন্ধতা আছে। ল্যণ্ডস্কেপ ফটোগ্রাফিতে সাকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা ,রাত প্রভৃতিতে বিভিন্ন রকমের আপাচার হয়। পরে এই নিয়ে লিখব।
গ) ডেফথ অফ ফিল্ড = লেন্স ও ক্যমেরা বোঝানো হয় ছবির কোন জায়গার কোন অংশকে আমি সার্ফনেশ রাখব ও কোন অংশকে ঘোলা করব। সামনের ও পিছনের কোন অংশকে আমি প্রকট করব তা। লেন্সের মাধ্যেমে সঠিক ফোকাশ করাকেই ডেফথ অফ ফিল্ড বলা হয়। তবে এটি নিযন্ত্রিত হয় আপাচার,ডেফট অফ ফিল্ডম সেন্সারের সাইজ এর উপর।
ঘ)এক্সপোজার = এটি হল সেন্সারের আলোক সংবেদনশীলতা। কি পরিমান আলো, কতক্ষণ ধরে পড়তে সঠিক ভাবে ল্যন্ডক্সেপকে তুলেধরা হবে তার পরিমাপ হল এক্সপোজার ।এটি ISO, আপাচার ও সাটার স্পিডের এর উপর নির্ভর করে।
ঙ) রুল অফ থার্ড = এটি একটি ছবি তোলা বা ছবি ক্রপ করার নিয়ম। দৈঘ্য ও প্রস্থে ছবিকে সমান তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এর পর ল্যাণ্ডস্কেপে কখনো দুই ভাগে ভূমি ও এক ভাগে আকাশ, আবার কখনো এক ভাগে ভূমি ও দুই ভাগে আকাশ রাখা হয়। একটি দৃষ্টি নন্দন সৌন্দর্য। তবে এটি প্রতিবিম্বের ক্ষেত্রে মানা হয় না।
চ) শাটার স্পিড = ক্যমেরার কতক্ষণ ধরে সেন্সারে আলো প্রবেশ করবে তার সময় সীমা নিধারণ করাই হল শাটার স্পিড। রাতের বেলা বেশিক্ষণ ধরে শাটার খুলে রাখার প্রয়োজন হয়ে পড়ে আর দুপুর বেলা কম সময় শাটার খুলতে হয়।
ল্যাণ্ডস্কেপ ফটোগ্রাফিতে যে যে উপকরণ গুলির দরকার হয় তা :
ক) লেন্স = যদিও ল্যণ্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির করতে গেলে একটা কিট লেন্সই যথেষ্ট তবু ভাল ভাবে ল্যাণ্ডস্কেপ করতে গেলে একটি ওয়াই এঙ্গেল লেন্স দরকার। কারণ অনেকটা জায়গা একটা জায়গায় রাখতে গেলে বেশী পরিমান এঙ্গেল অফ ভিউর প্রযোজন।
খ) সেন্সার = ল্যাণ্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি যে কোন সেন্সর দিয়ে করা যায়। কিন্তু যদি আপনার বেশি জায়গা দরকার হয় একটি মাত্র ক্লিকে তবে ফুলফ্রেম সেন্সার আপনার জন্য উপযুক্ত।
ঘ) ট্রাই পড = স্থীর ভাবে অনেক সময় নিয়ে শাটার খুলে রেখে ছবি তুলতে একটা ট্রাইপড অত্যন্ত জরুরী। ক্যামেরা কাঁপলে ছবিও কাঁপবে আর ছবি ব্লার হয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।
ঙ) রিমোট শাটার অন অফ = ক্যামরার কম্পন না করে ছবি তুলতে এই রিমোট শাটার অন অফ জরুরী। তা না হলে আনাকে টাইমার ব্যবাহার করতে হবে। তবে টাইমারের সীমা বন্ধতা আছে। ক্যামেরা কাঁপলে ছবিও কাঁপবে আর ছবি ব্লার হয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্য