ভেন্নার সাথে পরিচিত না এমন লোক খুব কম রয়েছে।
গ্রামের বা শহরের কমবেশি সবাই-ই ভেন্না গাছের সাথে পরিচিত।
ভেন্নার ইংরেজি নাম Castor
বৈজ্ঞানিক নাম Jatropha curcas
এবং এটি Euphorbi Aceae পরিবারে অন্তর্ভূক্ত।
সদ্য জন্মানো ভেন্না গাছের চারা।
ভেন্না গাছ ১০-১৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে।
গাছ বড় হলে এমন আকারের হয়।
এরা প্রায় ডালপালাহীন গাছ, উপরের দিকে অল্প ক’টি ডাল হতে দেখা যায়। গাছের কাণ্ডের ভেরতটা ফাঁপা থাকে।
একটি ভেন্না গাছ বড় হয়ে ফল দিতে প্রায় পাচ-ছয় মাস সময় লাগে।
এটি একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ।
ভেন্নার ফুল।
প্রথমে ফুল হয় এবং ফুল থেকে ফল হয়, ফলের গায়ের উপরিভাগ দেখতে কাঁটার মত মনে হয় কিন্তু এটি কাঁটা না।
দেখতে কাঁটার মত মনে হলেও এটা কাঁটা না।
হাত দিয়ে ধরলে বেশ নরম অনুভব হয়।
একটি ফলের মধ্যে তিনটি বীজ হয়।
এবং ফলগুলো থোকা বেঁধে হয়।
এরকম থোকা বেঁধে ফল হয়।
ফলের উপরিভাগ কাঁচা অবস্থায় দেখতে সবুজ এবং পরিপক্ব অবস্থায় মেটে/বাদামি রং ধারন করে।
একটি ফলের ভেতরের তিনটি বিচি।
বিচির ভেতরের মূল অংশ,যেটা তেলের মূল উপাদান।
স্মৃতি হিসেবে ভেন্না গাছের সাথে নিজের একটা ছবি রেখে দিলাম।
ছোটবেলায় বড়দের মুখে গল্প শুনতাম, ওনারা বলতেন ভেন্নার গোটা/ফলের বিচি থেকে তেল বের করা যায়।
শুনেছি ৯০ দশকের সময় এই ভেন্নার তেল বেশ প্রচলিত ছিলো বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে।
প্রযুক্তি এবং আর্থিক দূর্বলতার কারনে এটা ব্যাবহার করতেন তখনকার মানুষ।
ভোজ্য তেলের দাম বেশি হওয়ায় তখন সহজলভ্য ছিলো এই ভেন্নার তেলের ব্যাবহার।
কোনরকম যত্ন ছাড়াই যেখানে সেখানে এই গাছ জন্মাতো এবং রিষ্ট পুষ্ট হয়ে প্রচুর ফল ধরতো।
লোকজন সেই ফল সংগ্রহ করে কারখানায় নিয়ে ফল থেকে তেল বের করে আসতো।
সহজে পাওয়া যেতো বলেই এর ব্যাবহার ছিলো বেশি।
প্রযুক্তির ও আর্থিক উন্নয়নের কারনে এটি এখন হারাতে বসেছে।
কেউ তো খায়ই না, নতুন প্রজন্ম জানেই না যে ভেন্না কী জিনিস।
তবে প্রচুর গুণাগুণ থাকার কারনে এই তেলের ব্যাবহার এখনো অনেকেই করে থাকে।
ভেন্নার তেল একটি অতি সাধারণ এবং প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন ভেষজ তেল যা দৈনন্দিন নানান কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ত্বক , চুল ও স্বাস্থ্য সম্মৃদ্ধ এই প্রাকৃতিক উপকরণে আছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি এন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিস (যা প্রদাহ হ্রাস করে , জীবাণু সংক্রমন কমায়)
রেড়ির তেলের (ক্যাস্টর অয়েল) পুষ্টির মান
ওমেগা 3
ওমেগা সিক্স ফ্যাটি আসিড ও
ভিটামিন ই সমৃদ্ধ ক্যাস্টর অয়েলে রয়েছে অনেক ধরনের পুষ্টিকর উপাদান যা চুলের ফলিকল এবং ত্বককে পুষ্টি যোগায়।
এছাড়াও ভেন্নার তেলের আরও অনেক উপাকাররতা রয়েছে।
ভেন্নার তেলের উপকারী গুণসমূহ
১. কাঁচা ভেন্না সবজি হিসাবে খাওয়া যায় ( পরিপক্ক বীজ এবং ফল খাওয়া উচিত নয়)
২. চুল পরা রোধ করে।
৩. চুলকে ঘন করে।
৪. চোখের আইব্রো কে ঘন এবং কালো করে।
৫. ভেন্নার তেল ত্বককে মোলায়েম করতে সাহায্য করে।
৬. স্কিন থেকে ময়লা দূর করে।
৭. ডার্ক সার্কেল থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করুন ভেন্নার তেল।
৮. শুষ্ক ত্বক কে মোলায়েম করে।
৯. ত্বকের বর্ণবিলোপ দূর করে।
১০. বলিরেখা দূর করে।
১১. ত্বকের কালো দাগ দূর করে।
১২. মাথার স্ক্যাল্পকে সুস্থতা দান করে।
১৩. চুলের কন্ডিশন হিসেবে কাজ করে।
১৪. গোলকৃমির চিকিৎসার জন্যে এই তেল উপকারী।১৫. কাঁটা ঘা জীবানুমুক্ত করে।
১৬. ব্যাক পেইন কে দূর করে।
১৭. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।১৮. জয়েন্ট পেইনকে ধ্বংস করে।
১৯. ফুড এডিটিভস হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
২০. ফুডের ফ্লেভার করতে ভেন্নার তেলের বিভিন্ন রেসিপি আছে।
২১. ফাংগাস প্রতিরোধে করে ফলে মোল্ড প্রতিরোধ করে ইত্যাদি।
সুধুমাত্র গুণাবলির তথ্যগুলো গুগলসার্চ করে সংগ্রহীত।
গ্রামে বসতবাড়ি এবং নান্দনিক গাছপালা ও ফল গাছ রোপনের ভিড়ে হাড়িয়ে যাচ্ছে ভেন্না গাছ।
গ্রামে এখন খুব কম দেখা যায় গাছগুলো।
আমাদের উচিত এই অবহেলিত উপকারী ভেন্না গাছ আমাদের মাঝে টিকিয়ে রাখা।
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ