সতত, হে নদ তুমি পড় মোর মনে
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।
সতত যেমনি লোক নিশার স্বপনে
শোনে মায়া যন্ত্র ধ্বনি তব কলকলে
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে।
বহু দেশ দেখিয়াছি বহু নদ দলে
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মেটে কার জলে
দুগ্ধস্রোতরূপি তুমি মাতৃভূমি স্তনে।
কপোতাক্ষ নদ সম্পর্কে মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার ভালবাসা ও আবেগ কবিতার মাধ্যেমে এইভাবেই প্রকাশ করেছিলেন। আমি যেহেতু কবি নই, তাই ওঁনার মতো কবিতার ভাষায় প্রকাশ করতে না পারলেও আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের প্রতি আমার ভালবাসার ছিটেফোঁটাও কমতি নেই।
ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তি হিমালয় পর্বতমালার কৈলাস শৃঙ্গের নিকট জিমা ইয়ংজং হিমবাহে, যা তিব্বতের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। ব্রহ্মপুত্র এশিয়া মহাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। সংস্কৃত ভাষায় ব্রহ্মপুত্রের অর্থ হচ্ছে “ব্রহ্মার পুত্র”। এজন্য একে “ব্রহ্মপূত্র নদ” বলা হয়।
১৭৬২ সালের আরাকান ভূমিকম্পের ফলে ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যমুনা নদীর দিয়ে চলে যায়। আর আগে আমাদের এই পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়েই এই নদের বেশির ভাগ পানি প্রবাহিত হত।
আমাদের বাড়ি নদীর এপাড়ে এবং আমার নানুর বাড়ি নদীর ঐ পাড়ে হওয়ায় জন্ম লগ্ন থেকেই এই নদীর সাথে আমার একটা সম্পর্ক হয়ে ওঠে।
নদীর পাড়ের বালির মাঝে খেলাধুলা করে, ভর দুপুরে নদীর পানিতে ঝাঁপিয়ে এবং পাড়ের পাখির বাসা থেকে ডিম সংগ্রহ করে বড় হয়েছি। যদিও এখন সেগুলো আর করা হয় না তবুও এই সুখ স্মৃতি গুলো কখনো ভোলার নয়।
তবে এখনো মন খারাপ হলে বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে হলে চলে যায় নদীর পাড়ে, কাটিয়ে দেই ঘন্টার পর ঘন্টা। শহর থেকে দীর্ঘদিন পর গ্রামে আসলে সর্বপ্রথম ছুটে যায় এই নদীর পাড়ে।
আমি ভাল সাঁতার না জানায় অনেকবার ডুবে গিয়েছিলাম এই নদীতে, গত শীতেও আমি আও আমার দুই বন্ধু ছোট নৌকা নিয়ে ডুবে গিয়েছিলাম মাঝ নদীতে। ভাগ্যক্রমে কেউ না কেউ আমাকে উদ্ধার করেছে সবসময়, নাইলে হয়তো এখন আমার আর এই পোস্ট লেখা হতো না।
এক এক ঋতুতে এই নদীতে এক এক রুপ দেখা যায়, বর্ষায় যেন ভয়ংকর স্রোতে স্রোতস্বিনী হয়ে ওঠে, তেমনি শরৎতে থাকে পরিস্কার জলে একদম শান্তশিষ্ট, দুইপাড়ে থাকে সাদা মেঘের মতো কাঁশফুল আর শীতে একদম জলহীন মরা নদীতে পরিণত হয়।
এই নদীর জল দিয়ে যেমন আশেপাশের মানুষ চাষাবাদ করে, নৌকা দিয়ে সহজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায়, মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে, তেমনি এই নদীর পাড় ভাঙনের ফলে সর্বস্বান্ত হয়েছে নদীর পাড়ের বহু মানুষ, প্রতি বছর তার বুকে ডুবে প্রাণ হারায় অনেক কিশোর, জোয়ান, বৃদ্ধা।
এইতো গত সপ্তাহে নৌকা বাইচ দেখতে গিয়ে প্রাণ হারান কয়েকজন। এই নদী যেমন আশির্বাদ তেমনি অভিশাপ ও।
তবে একটা কথা না বললেই নয়, আমরা অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণ করে, বালু উত্তলন করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছি, যার ফলে নদীভাঙনের তীব্রতা দেখা দিচ্ছি, বিভিন্ন বর্জ্য নদীতে ফেলে নদীর তলদেশ ভরাটের পাশাপাশি নদীর পানিকে দূষিত করছি, এই দিকে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। একটা কথা মনে রাখতে হবে, নদী আমাদের দেশের ধমনীর মতো, নদী বাঁচলে আমরা বাঁচব।
নদী নিয়ে আপনার কোনো অভিজ্ঞতা থাকলে বা নদীর সাথে আপনার কোনো ছবি থাকলে শেয়ার করতে পারেন আমার এই পোস্টের কমেন্ট এ।
সময় নিয়ে পোস্টটি পড়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
#bdlg #localguidesbd