নোয়াখালী—বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি বিখ্যাত ও প্রাচীন জেলা। এর পূর্ব নাম ছিলো ভুলুয়া। নোয়াখালী দেশের একমাত্র জেলা যার নিজ নামে কোনো শহর নাই। জেলা শহরের নাম- মাইজদী। নোয়াখালীর অন্যতম একটি ব্যস্ত শহর ও বাণিজ্যকেন্দ্র ‘চৌমুহনী বাজার’ —যা একসময় মুদ্রণ ও প্রকাশনা ব্যবসা, সরিষার তেল আর মিল-কারখানার জন্য বিখ্যাতছিলো। এখনো একটি জুট মিল আছে।
নোয়াখালী ও নোয়াখালীর মানুষ সারাদেশের মানুষের কাছে তাদের কথা ও ভাষার সুমিষ্টতার জন্য সুপরিচিত। আছে আপ্যায়নের সুখ্যাতি। আগেকার যুগে নোয়াখালীর ধর্মপ্রচারকগণ সারাদেশে ঘুরেঘুরে সবাইকে ঈমান-আকায়েদ, দুয়া-ক্বিরাত শিখিয়েছেন ও মক্তব প্রতিষ্ঠা করেছেন-এজন্য অনেক প্রবীণ মানুষ নোয়াখালীকে ভালোবাসে ও সম্মান করে থাকে।
নোয়াখালী সম্মন্ধে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করা হলো।এবার আসি কিছু বিখ্যাত খাবার ও দর্শনীয় স্থানের আলোচনায়।
নোয়াখালীর অন্যতম দর্শনীয় স্থান হলো —নিঝুম দ্বীপ।
Nijhum Dwip
নিঝুম দ্বীপ হাতিয়া উপজেলায় অবস্থিত বঙ্গপসাগরের ছোট্ট একটি দ্বীপ। এই দ্বীপে শীতকালে ঘুরার উপযুক্ত সময়।
নিঝুম দ্বীপের এক দিকে মেঘনা নদী আর তিন দিকে বঙ্গোপসাগর ঘিরে রেখেছে। নিঝুমদ্বীপের সবচেয়ে আকর্ষণীয়বিষয় হলোমাইলের পর মাইল জুড়ে কেওড়া বন আর সেই বনের পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা চিত্রা হরিণ। নিঝুম দ্বীপে হরিণের সংখ্যাপ্রায় চল্লিশ হাজার। নিঝুম দ্বীপের মতো দেশের অন্য কোথাও এতো হরিণ একসাথে দেখা যায় না। এখানে দেখা মিলবে প্রায় ৩৫প্রজাতির বিভিন্ন পাখির। এছাড়া দ্বীপে রয়েছে বন্য শুকর, শেয়াল, বানর ও নানারকম সাপ।
যাতায়াত: দেশের যেকোনো স্থান থেকে সরাসরি নোয়াখালী সোনাপুর। সেখান থেকে সিএনজি বা যানবাহনে করে চেয়ারম্যানঘাট। তারপরে সেখান থেকে ট্রলার/সি-ট্রাক/স্পীডবোটে হাতিয়ার নলচিরা ঘাট। তারপর মোটরসাইকেলে মোক্তারিয়া ঘাট।তারপরে ট্রলারে চড়ে নিঝুমদ্বীপের বন্দরটিলা। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে নামার বাজার। (সংক্ষেপে)
গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট
Gandhi Ashrom Trust Gate
নোয়াখালীর একটি সমাজকল্যাণমুলক প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৬ সালে জাতিগত সংঘাতের পরে মহাত্মা গান্ধী নোয়াখালী আগমন করেন।১৯৪৭ সালের ২৯ জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধী সোনাইমুড়ি উপজেলার জয়াগ বাজার নামক স্থানে পরিদর্শনের জন্য গেলে, সেখানকার তৎকালীন জমিদার ব্যরিস্টার হেমন্তকুমার ঘোষ তার সকল সম্পত্তি গান্ধীজির আদর্শ প্রচার এবং গান্ধীজির স্মৃতি সংরক্ষণের একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে জন্য দান করেন এবং গান্ধীজির নামে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।
গান্ধি আশ্রমে গান্ধিজির নামে একটি জাদুঘরও আছে যাতে গান্ধিজির তখনকার নোয়াখালী সফরের শতাধিক ছবি ও ব্যবহৃতজিনিসপত্র ও প্রকাশিত লেখা সংরক্ষিত আছে।
মোঘল শিল্পকর্মের অনুপম সৃষ্টি বজরা শাহী জামে মসজিদ
Bazra Shahi Jame Masjid
মোঘল আমলে স্থাপিত কয়েকটি ঐতিহাসিক মসজিদের মধ্যে বজরা শাহী জামে মসজিদ অন্যতম।
নোয়াখালীর চৌমুহনী-চৌরাস্তা থেকে প্রায় পাঁচ কিলো মিটার উত্তরে৭নং বজরা ইউনিয়নের বজরা নামক স্থানে প্রধান সড়কথেকে একটু পশ্চিমদিকে এটি অবস্থিত। ১৭৪১ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লীর শাহী মসজিদের অনুকরণে এটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদটি নির্মাণে সময় লেগেছে ২৬বছর। মসজিদের সামনে একটি বিশাল দিঘি রয়েছে। প্রতিদিন শতশত দর্শনার্থী এখানে এসে নামাজ আদায় করে ও সৌন্দর্য উপভোগ করে। জুমারদিন ও ছুটির দিনে উপস্থিতি বেশি হয়।
আরও কয়েকটি দর্শনীয় স্থান:
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর
মুছাপুর ক্লোজার (মিনি কক্সবাজার)নোয়াখালী ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্ক
নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদ
লুর্দের রানীর গির্জা
গ্রীন পার্ক, ছাতারপাইয়া
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
মাইজদি কোর্ট বিল্ডিং
মাইজদী পৌর পার্ক
এবার আসি নোয়াখালীর বিখ্যাত খাবার নিয়ে…
নোয়াখালী সারাদেশের মধ্যে আতিথিয়েতার জন্য বিখ্যাত। এজন্য নোয়াখালীবাসী যেকোনো খাবারই খুব যত্ন সহকারে প্রস্তুত ওপরিবেশন করে থাকে। বিখ্যাত খাবারের মধ্যে আছে —নারিকেলের নাড়ু, ম্যারা, খোলাজা পিঠা, মরিচখোলা, নকশি পিঠা, চিতইপিঠা, সাইন্না পিঠা, পুলি পিঠাসহ বাহারি স্বাদের পিঠা।
ম্যারা পিঠা/সাইন্না পিঠা
ভাপা পিঠা/চিতই পিঠা
কলাপাতায় মরিচখোলা
একসময় শীতের সিজনে নোয়াখালীর প্রতিটি ঘরে ঘরে পিঠা বানানোর মহাউৎসব শুরু হতো। একেকদিন একেক ধরণের পিঠা তৈরী হতো। এখন অবশ্য আধুনিকতার ছোঁয়ায় এসব কমে আসলেও পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। বর্তমানে উল্লেখযোগ্য খাবার হচ্ছে- **দেওটির ছানা মিস্টি, মহিষের দুধের দই, সিরাজ মিয়ার পোলের দই।**আকারে ছোট্ট ছোট্ট রসালো মিষ্টির জন্য দেওটি অনেক প্রসিদ্ধ। গরম গরম মিষ্টির স্বাদ নিতে হলে আপনাকে সরাসরি চলে যেতেহবে সেসব দোকানে।
মহিষের দুধের দইয়ের জন্য বিখ্যাত জেলার কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট বাজার। এখানকার বিভিন্ন খামারে হাজারেরমত মহিষ রয়েছে। খামারগুলো থেকে দুধ সংগ্রহ করে তৈরি করা হয় টাটকা দই। আশেপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিনশতশত মানুষ ভীড় করেন এখানে দধি নেয়ার জন্য।
গোস্তের পিঠা/সব্জির পিঠা। (আমার তোলা ছবি)
আরও অনেক বিখ্যাত খাবার ও উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান আছে নোয়াখালীতে। পোস্টে উল্লেখিত ঐতিহাসিক স্থানসমূহের লোকেশন ও আরও কয়েকটি দর্শনীয় স্থান দেখতে ক্লিক করুন এই লিংকে।
নোয়াখালীর ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানসমূহ
তথ্য ও ছবি: ইন্টারনেট, উইকিপিডিয়া
#bdlg200 #Meetup200









