মোদের গরব, মোদের আশা … বাংলাভাষা খ্যাত কবি অতুলপ্রসাদ সেন, ঔপন্যাসিক আবু ইসহাক ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বিখ্যাত বিপ্লবী নেতা পুলিন বিহারী দাশের জন্মস্থান বর্তমান শরিয়তপুর জেলা। শরিয়তপুর জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে মডার্ন ফ্যান্টাসি কিংডম, বুড়ির হাট মুন্সী বাড়ী ও মসজিদ, রুদ্রকর মঠ, শিবলিঙ্গ, মহিষারের দীঘি, হাটুরিয়া জমিদার বাড়ি, রাম সাধুর আশ্রম ও ধানুকার মনসা বাড়ি বেশ জনপ্রিয়।
বুড়ির হাট মসজিদ
জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার বুড়ির হাট মসজিদটি খুবই বিখ্যাত এবং ইসলামী স্থাপত্যকলার নিদর্শন।জেলার প্রধান আর্কষন এই বুড়ির হাট মসজিদ। শরীয়তপুর ভেদরগঞ্জ উপজেলার বুড়ির হাট বাজারে এই মসজিদের অবস্থান। প্রায় অনুমানিক ১০০ বছর আগের তৈরি মসজিদটি ইসলামিক স্থাপত্য কলার এক অপূর্ব নির্দশন।
রুদ্রকর মঠ
দেড়শত বছরের পুরনো এই মঠটি শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নে অবস্থিত। ঐতিহাসিক বিশিষ্ট স্থানের মধ্যে অন্যতম এটি। এখানকার হিন্দুগণ দেশ বিভাগের পূর্বে বিশেষ ভুমিকা পালন করেন। এখানকার মঠ বিখ্যাত। প্রতি বছরই এখানে সাড়ম্বরে পূজা ও কীর্তন অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।এই মঠটি দেখার জন্য বহু লোক আসে।
সুরেশ্বর দরবার শরীফ
শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলায় সুরেশ্বর গ্রামে সুরেশ্বর দরবার শরীফ অবস্থিত। পদ্মা পাড়ের এই জেলার সুরেশ্বর গ্রামে হযরত জান শরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী (রহঃ) জন্ম গ্রহণ করেন। অনেক ভক্তগণ শাহ্ সুরেশ্বরী (রহঃ) কে “জানু বাবা” এবং “দয়াল বাবা” বলে ডাকেন। হযরত জানশরীফ শাহ সুরেশ্বরী (রহঃ) ছিলেন সুরের প্রেমিক। সুরেশ্বরী (রহঃ)আল্লাহ্ ও রাসুলের প্রতি প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনে সুর বা সঙ্গীতকে বিশেষভাবে ব্যবহার করেন। তাঁর মতে, ‘সুর’ মনে ভাব ও প্রেমের জন্ম দেয়। প্রতি বছর অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী এবং সাধারণ মানুষ সুরেশ্বর দরবার শরীফ দর্শন করে থাকে।
মর্ডান ফ্যান্টাসি কিংডম
কর্মময় জীবনের ব্যস্ততার অবসরে একটু প্রশান্তি প্রদানের উদ্দেশ্যে ২০১১ সালে মডার্ন হারবাল গ্রুপের চেয়ারম্যান ডা. আলমগির মতি প্রায় ৫০ একর জমি নিয়ে মডার্ন ফ্যান্টাসি কিংডম পার্কটি প্রতিষ্ঠা করেন। শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি গ্রামের মনোরম পরিবেশে অবস্থিত মর্ডান ফ্যান্টাসি কিংডমে রয়েছে বিনোদনের সকল আধুনিক সুযোগ সুবিধা। এখানে আছে বিভিন্ন ধরনের রাইড, মিনি চিড়িয়াখানা, স্পীড বোট, শিশু রাইড, সুপার চেয়ার, ট্রেন, ওয়াটার হুইল, ওয়াটার রাইট, ক্যাবল কার, মেরি গ্রাউন্ড ইত্যাদি। মডার্ন ফ্যান্টাসি কিংডমের মিনি চিড়িয়াখানায় রয়েছে হরিণ, চিতাবাঘ, কুমির, অজগর সাপ, বানর, ময়ূর, সজারু, ভাল্লুক, কচ্ছপ, উটপখি, ইমু পাখি, কালিম পাখি, খরগোশ, গিনিপিগ, বক্সার ডক এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। বিভিন্ন বিনোদন আয়োজন ছাড়াও মডার্ন ফ্যান্টাসি কিংডমে যেকোন সামাজিক অনুষ্ঠান এবং বনভোজন আয়োজনের সকল সুব্যবস্থা মডার্ন ফ্যান্টাসি কিংডম প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।
ধানুকার মনসা বাড়ি
৬শ বছরের প্রাচীন এ বাড়িটিকে ঘিরে রয়েছে নানান অলৌকিক ও কিংবদন্তী লোক কথা। জেলার প্রাচীন ব্যক্তিগণ এ বাড়িকে ময়ুর ভট্টের বাড়ি নামে চিনে থাকেন।। সুলতানী ও মোগল আমলের নির্মাণ শৈলিতে নির্মিত এ বাড়িতে ৫টি ইমারত আছে । এ বাড়ীর কিশোর একদিন প্রত্যশে বাগানে ফুল কুড়াতে গিয়ে বাগানে মস্তবড় সাপ দেখে আসেন। পর দিনও তাই অবস্থা। তৃতীয় দিনে সাপটি তার পিছন পিছন বাড়ি এসে নৃত্য করতে থাকে। বাড়ির লোকজন ভয়ও বিস্ময়ে বিষয়টি অনুধাবন করতে থাকেন। রাতে মনসা দেবীর মাধ্যমে আদৃষ্ট হয়ে নতুন করে মনসা মন্দির স্থাপন করে পূজা শুরু করা হয়। এখনও এ বাড়িতে মনসা পূজার সময় সাপের সমাগম হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবী। এ বাড়িতে রয়েছে পিতলের মূর্তি। যে মূর্তিটি তৎকালিন সময় কীর্তিনাশা নদীতে মাছ ধরার সময় জালে মূর্তিটি পেয়ে জেলে অলৌকিক ভাবে এ মন্দিরে রেখে যান। যা আজঅবধি এ মন্দিরে আছে।
মহিষারের দিগম্বরী দীঘি
শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ৬০০ বছরের পুরনো মহিষারের দিগম্বরী দীঘি (Mohisar Digumbori Dighi) হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। মোঘল আমলের স্বাধীন ১২ ভূঁইয়ার এক ভূঁইয়া বিক্রমপুর পরগনার জমিদার রাজা চাঁদ রায় দিগম্বরীর সন্ন্যাসীদের অনুরোধে ১০ একর জায়গার উপর এই দীঘি খনন করেন। মহিষারের দিগম্বরী দীঘির চারপাশে ইতিহাসের অমর সাক্ষী দিগম্বরী সন্ন্যাসী বাড়ি, মেলা চত্বর, জোড়া পুকুর, মনসা মন্দির, কালি মন্দির চত্বর ও লক্ষ্মী মন্দিরসহ অসংখ্য স্থাপনা ঘিরে রয়েছে। ১৯৮২ সালে দীঘিটি পুনঃখননের সময় ৪২ কেজি ওজনের কষ্টি মূর্তিসহ বেশকিছু দুর্লভ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায়।
উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ কষ্টি পাথরের শিবলিঙ্গ
শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর বাজার সংলগ্ন পাঁচানি বাড়িতে অবস্থিত একটি ছোট শিব মন্দির। এই ছোট মন্দিরেই রয়েছে এশিয়ার সবচেয়ে বড় শিবলিঙ্গের কষ্ঠি পাথরের মূর্তি। কালো কষ্ঠি পাথরের এই মূর্তিটিকেই উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় শিবলিঙ্গের মূর্তি হিসেবে বলা হয়ে থাকে। এই মন্দিরে শিব মূর্তি ছাড়াও আছে কষ্টি পাথরের একটি কালো গো-বাছুর। নিয়মিত পূজা অর্চনা করা ছাড়াও দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ দেখতে আসে এই শিবমন্দির। এখানে এই মন্দিরটির বয়স মাত্র ৩৫ বছর হলেও মন্দিরে অবস্থিত শিব লিঙ্গ ও গো বাছুরের মূর্তির বয়স কয়েকশো বছর। এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোনের বাইরেও এর প্রত্নতাত্মিক নির্দশন হিসেবেও এর গুরুত্ব রয়েছে।
জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
দেশের পশ্চাৎপদ জনপদ শরীয়তপুর অঞ্চলের মানুষের মাঝে উচ্চ শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে জেড,এইচ শিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত চেয়ারম্যান জনাব জয়নুল হক সিকদার তাঁর নিজ জেলা শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ থানাধীন মধুপুর গ্রামে ২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। এর নেপথ্যে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা পর্ষদ ও দেশ বিদেশের সনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চতর ডিগ্রীধারী শিক্ষক/শিক্ষিকাদের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা। প্রতিষ্ঠার প্রথম বর্ষেই বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রশংসা অর্জন কুড়াতে সমর্থ হয়। উন্নত বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পাঠ্যসূচি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টি চারটি অনুষদ নিয়ে যাত্রা শুরু করে।
কার্তিকপুর জমিদার বাড়ি
কার্তিকপুর জমিদার বাড়ি টি শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার কার্তিকপুর গ্রামে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি যা স্থানীয়দের কাছে চৌধুরী বাড়ি নামেও বেশ পরিচিত। আনুমানিক দুইশো বছর পূর্বে এই জমিদারির সূচনা হয় বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে জমিদার বাড়িটিতে সুন্দর ও কারুকার্যময় একটি দ্বিতল বিশিষ্ট্য পরিত্যক্ত ভবন রয়েছে। এছাড়াও পাশেই রয়েছে একটি সাঁন বাঁধানো পুকুর।
রামসাধুর আশ্রম
শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নে অবস্থিত। এখানে শত বছরের পুরানো এই আশ্রমটি এই ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নই গোলক চন্দ্র সার্বভৌম ও শ্রীযুক্ত কালি কিশোর স্মৃতি রত্ন মহাশয়ের বাসস্থান। প্রতি বছর শীতের শেষে এই আশ্রমকে কেন্দ্র করে তিন দিনের মেলা বসে।
এছাড়া শরিয়তপুর জেলার বিখ্যাত খাবারের মধ্যে রয়েছে সন্দেশ
কষ্ট করে পোস্টটি পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আর শরীয়তপুর আসার আমন্ত্রণ রইল