Banner of the post.
Photo: Khondokar Riazul Islam
২০২০ সালের ২৬শে মার্চ থেকে করোনাভাইরাস মহামারি প্রতিরোধে লকডাউন শুরু হবার পর থেকে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে যায়। মানুষ হয়ে পড়ে ঘরবন্দী; রাস্তাঘাট, বাজার-শপিংমল, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, পর্যটন এলাকা হারিয়ে ফেলে তার এতদিনের চিরচেনা স্বাভাবিক রূপ। এভাবে একে একে কেটে যায় আটটি মাস, ইতি ঘটে ২০২০ এর। আগমন ঘটে ২০২১ এর, মানুষ নতুন আশায় বুক বাঁধে, হয়তো এবছর আমরা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো।
বছরের শুরুতে তেমনই মনে হয়েছিল। মহামারী শুরুর পর প্রথমবার কোভিড আক্রান্ত হয়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা নেমেছিল এক অংকের ঘরে। দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার, এমনকি পাঁচশ-এরও নিচে নেমেছিলো জানুয়ারি মাসে। করোনা পরিস্থিতি তখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। বহুদিন পর দেশের মানুষ অনেকটা নিশ্চিন্তে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেল।
আমিও একটা সুযোগ পেলাম এক দিন মুক্ত বাতাসে বাইরে ঘুরে বেড়াবার। জানুয়ারির মাঝামাঝি প্রস্তাব পেলাম যশোরের গদখালীর ফুলের রাজ্যে ভ্রমণের। যশোর শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার ৯০টি গ্রামজুড়ে আবাদ করা হয় নানা রঙের, নানা জাতের ফুল। দেশের মোট ফুলের চাহিদার ৭০% আসে এখান থেকে।
আমাদের পরিকল্পনা ছিল, ২৪ জানুয়ারি সকাল ৬:৩০ এর খুলনা থেকে বেনাপোলগামী কমিউটার ট্রেন বেতনা এক্সপ্রেসে চড়ে ঝিকরগাছা যাবো এবং ওখান থেকে ইজিবাইক বা ভ্যানে গদখালীর ফুলের বাগান। সেখানে সারাদিন ঘুরে বিকালে ৫টার ফিরতি বেতনা এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে খুলনা ফিরে আসবো।
আমাদের ভ্রমণকারীদের সংখ্যাও কিন্তু কম ছিল না, ১১ জন। এর মধ্যে ৫ জন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সামনের ঘটনা বিবরণী লেখার সুবিধার্তে এদেরকে আমি নাম দিলাম “খুবি গ্রুপ”। অন্য গ্রুপে ছিল ৬ জন, যারা যথাক্রমে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এদের নাম দিলাম “খিচুড়ি গ্রুপ”। বলা বাহুল্য, আমি ছিলাম খিচুড়ি গ্রুপে।
পরিকল্পনা মতো ২৪ জানুয়ারি ভোর ৬টায় বাসা থেকে বের হলাম রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশ্যে। ভোর না বলে শেষ রাতও বলা যায়, কারণ শীতের বেলায় ৬টার সময় ফজরের জামাতও হয়না। যাই হোক, যাচ্ছি যশোরে, আর এটা অনেকেই জানেন যে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দুটো জায়গায় সবচেয়ে বেশি ঠাণ্ডা পড়ে- চুয়াডাঙ্গা আর যশোর। তো সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিলাম। ট্রাউজারের উপর প্যান্ট, ফুল শার্টের উপর সোয়েট শার্ট, তার উপর হুডি, মাফলার, মাস্ক সব কিছু পেচিয়ে নিলাম যাতে ঠাণ্ডা লাগিয়ে বাসায় ফিরতে না হয়।
Khulna Railway Station.
Photo: Sadman Rafid (December 2020)
ঘন কুয়াশার চাদর ভেদ করে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে এসে পৌছালাম। অন্যরাও যথাসময়ে স্টেশনে এসে পৌছালো। এরপর টিকিট কাউন্টারে টিকিটের খোঁজ নিতে গিয়ে অপ্রত্যাশিত খবর পাওয়া গেল। সকালের বেতনা এক্সপ্রেস ট্রেনটা বন্ধ আছে গত বছরের লকডাউনের শুরু থেকেই। অথচ স্টেশনে ট্রেন চলাচলের যে সময়সূচীর তালিকা আছে সেখানে বেতনা এক্সপ্রেসের সূচী দিব্যি লেখা আছে।
Inside Khulna Railway station building.
Photo: Sadman Rafid
সব পরিকল্পনা শুরুতেই ভণ্ডুল হয়ে গেল। তবুও সবাই যখন চলে এসেছে তাই বিকল্প ব্যবস্থা করতে হলো। পরবর্তী ট্রেন ছিল চিলাহাটিগামী সীমান্ত এক্সপ্রেস, যেটা ছাড়ার কথা সকাল ৭:১৫-এ, কিন্তু কুয়াশার কারণে ট্রেন ছাড়বে ১ ঘণ্টা দেরিতে। আবার এই ট্রেনে ঝিকরগাছা পর্যন্ত যাবে না, নামতে হবে যশোরে, ওখান থেকে বিকল্প বাহনে গদখালী যেতে হবে। এছাড়া বেতনা এক্সপ্রেসে ঝিকরগাছা পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া যেখানে ৪৫ টাকা, সেখানে সীমান্ত এক্সপ্রেসে যশোর পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া ৭০ টাকা।
Morning fog at Khulna Railway station platform.
Photo: Sadman Rafid
কিন্তু কি আর করার, অন্য ভালো বিকল্প নাই, কারণ বাসে ভাড়া আরো বেশি আর খুলনা- যশোর মহাসড়কের অবস্থা খারাপ। তাই সবাই স্টেশনে গল্পগুজব করে সময় কাটালাম। অবশেষে সকাল ৮টার দিকে সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি স্টেশনে আসলো। ট্রেনে ওঠার পর যথাসময়েই, অর্থাৎ ৮:১৫ মিনিটে ট্রেন যাত্রা শুরু করলো।
Jashore Railway Station.
Photo: Sadman Rafid
১ ঘণ্টা পর আমরা যশোর স্টেশনে নামলাম। স্টেশন থেকে বের হবার পর স্টেশনের সামনে থেকেই দুটো ইজিবাইক রিজার্ভ করলাম স্টেশন থেকে গদখালী আসা যাওয়া চুক্তিতে। দামাদামী করে দুটো ইজিবাইকের ৫০০ টাকা করে মোট ১০০০ টাকা ভাড়া ঠিক করে গাড়িতে উঠে পড়লাম। ঘড়িতে তখন বাজে ৯:৩০।
যশোর শহর থেকে বেরিয়ে ঐতিহাসিক যশোর রোড ধরে আমরা যাচ্ছিলাম বেনাপোলের দিকে। মহাসড়কের দুইপাশের জমি কুয়াশায় তখনো কুয়াশায় ঢাকা, সেই ফাঁকা জমির উপর দিয়ে বয়ে আসছিল শৈত্যপ্রবাহের হিমেল বাতাস। তার সাথে আমাদের ইজিবাইককে পাশ কাটিয়ে মহাসড়ক দিয়ে দ্রুতগতিতে যাওয়া বাস-ট্রাকের হুশ হুশ বাতাস ঠাণ্ডায় সবাইকে জমিয়ে দিচ্ছিলো। যশোর রোড দিয়ে যেতে যেতে আরো চোখে পড়লো সড়কের দুইপাশ এর শতবর্ষী ইয়া মোটা মোটা শিশু গাছ, যার অনেকগুলোর গায়ে অসংখ্য গোবরের চাকা লেপে রাখা শুকানোর জন্য।
A street sign in front of Panisara Flower Market.
Photo: Khondokar Raisul Islam
ঝিকরগাছা পৌরসভা ও কপোতাক্ষ নদ পেরিয়ে গদখালী বাজার পৌঁছে ইজিবাইক মহাসড়ক ছেড়ে ঢুকলো গ্রামের রাস্তায়। গ্রামীণ রাস্তা হলেও রাস্তার মান খুবই ভালো। কারণ ২০১৯ সালে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার এই সড়কটির মানোন্নয়নের আশ্বাস দেন যাতে ফুল চাষীরা সহজে ফুল বাজারজাত করতে পারে। এরপর ইউএসএআইডির অর্থায়নে রাস্তাটি পুনর্নির্মাণ করা হয়।
যশোর থেকে রওনা হবার এক ঘণ্টার মধ্যে সকাল ১০:৩০এ আমরা পানিসারা ফুলের বাজারে পৌছালাম। এই জায়গার আরেক নাম হাড়িয়া “ফুলের মোড়”। এখানে বেশ কিছু ফুলের দোকান আছে। তবে প্রথমে সবাই চললাম ফুলের বাগান দেখতে।
Flowers for sale.
Photo: Sadman Rafid
মূলত গদখালী বাজারে পৌছানোর আগে থেকেই মহাসড়কের দুইপাশে জমিতে ফুলের চাষ করতে দেখা যায়। সেখান থেকে পুরো পথে চোখে পড়ে নানা জাতের ফুল ও সরকারি অর্থায়নে তৈরি পলি শেড। ওই শেডগুলোর ভিতরে মূলত উন্নত ও দামী জাতের ফুলগুলো চাষ করা হয়। ফুলের মোড় থেকে কিছুটা সামনে হেঁটে আমরা একটা মাটির রাস্তায় উঠলাম। সেখানে রাস্তার দুইপাশে গোলাপ, গাঁদা, জার্বেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ নানা জাতের ফুল এর বাগান ছিল। দূরের বাগানে ফুল চাষীদের ফুল সংগ্রহ করতে দেখা যাচ্ছিল।
Roses wrapped with net to prevent them from blooming.
Photo: Khondokar Riazul Islam
এখানকার ফুল বাগানগুলোর বেশকিছু ছিল উন্মুক্ত, বিশেষ করে যেগুলো একদম রাস্তার পাশে সেগুলো; যে কেউ বাগানে নামতে পারে। যেগুলো রাস্তা থেকে দূরে সেগুলো একটু সুরক্ষিত, বেড়া দিয়ে ঘেরা। এগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটায় আবার টাকার বিনিময়ে প্রবেশ করা যায়, অথবা বাগানের ফুল কিনলে প্রবেশ করতে দেয়। তবে সরকারি অর্থায়নে তৈরি শেডগুলোতে ঢোকার বা বাইরে থেকে ভিতরে দেখার কোনো উপায় নেই।
Walking through the flower gardens at Haria.
Photo: Seikh Sadiul Islam Tanvir
ঘড়িতে বেলা এগারোটা বাজলেও কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা মিলেনি। এদিকে বাগানে যেরকম ফুল দেখব আশা করেছিলাম ততটা ফুলও নেই। মাটির রাস্তার পাশে কয়েকজন ফুল বিক্রি করছিলেন, হালকা খাবারও বিক্রি হচ্ছিলো। একজন ফুল বিক্রেতার সাথে কথা বলার সময় বাগানের ফুলের ব্যাপারে বললে তিনি বললেন, “আপনাদের ভালো লাগবে কী, আজকে বাগানের ফুল দেখে আমাদেরই পছন্দ হচ্ছে না।” কপাল খারাপ হলে যা হয় আরকি। যারা গদখালীতে গিয়ে যথেষ্ট ফুল দেখতে পেয়েছেন তারা নিচে মন্তব্য করে জানাবেন যে কোন সময়ে বেশি ফুল দেখতে পাওয়া যায়।
Panisara Flower Market.
Photo: Sadman Rafid
ফুল বাগানে ঘোরাঘুরি শেষে পানিসারা ফুলের বাজারে ফিরে এলাম। বাজার থেকে কিছু ফুলও কিনলাম। এদিকে সকাল থেকে একটুখানি আলুমাখা ছাড়া পেটে কোনো খাবার পড়েনি। কিন্তু বেলা বারোটা বেজে যাওয়ায় বাজারের পাশের খাবারের হোটেলে আর খাবার নেই। তাই সিদ্ধান্ত হলো যশোরে ফিরে যাওয়ার। একটু অতৃপ্তি নিয়েই তাই পানিসারা বাজার থেকে যশোরের দিকে যাত্রা শুরু করলাম।
Sadman Rafid holding flowers in his hands in front of a flower shop in Panisara flower market.
Photo: Toufiq Ratul
দুপুর একটায় যশোর রেলওয়ে স্টেশনে পৌছালাম। ইজিবাইকের ভাড়া মিটিয়ে স্টেশনে ট্রেনের খোঁজ নেয়া হলো। জানা গেল যে খুলনার ট্রেন আসতে বেশ দেরি। তাই এবার সবাই চললাম দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য নাজমা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে। এখানকার গরুর কালাভুনা যশোরে বিখ্যাত। স্টেশন থেকে ইজিবাইকে অল্প সময়েই পৌছে গেলাম যশোর চৌরাস্তায়, এরপর সেখান থেকে হেঁটে রেস্তোরাঁয়।
নাজমা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের পরিবেশ মূলত একটা সাধারণ ছিমছাম খাবারের হোটেলের মতো, আবার রেস্তোরাঁর অবস্থান মূল সড়ক থেকে একটা সরু গলির ভিতরে। দুপুরবেলা হওয়ায় মানুষের ভীড় ছিল ভালোই।
Inside Nazma Hotel & Restaurant
Photo: Sadman Rafid
আমরা টেবিলে বসে ভাত, কালাভুনার অর্ডার দিলাম। কেউ কেউ সাথে মাছ আর ডাল অর্ডার দিলো। অল্পসময়ের মধ্যে খাবার পরিবেশন করা হলো। ভাতের সাথে দেয়া হলো তিন পিস কালাভুনা মাংস, যার দাম ছিল ৯৫ টাকা। কিন্তু আসলে ওখানে ছিল এক পিস হাড্ডি, এক পিস চর্বি আর এক পিস মাংস। মানে ৯৫ টাকা দিয়ে মাত্র এক পিস মাংসই পাতে পড়েছিল। অন্যদেরও কমবেশি একই অবস্থা। তবে হোটেলের দায়িত্বরতদের কাছে চাইলেই এক বাটি করে কালাভুনার ঝোল পাওয়া যাচ্ছিল, ঝোল আর ডাল দিয়ে ভাত মোটামুটি ভালোই লেগেছিল।
Menu of Nazma Hotel & Restaurant.
Photo: Sadman Rafid
খাওয়ার পর্ব শেষে আবার ফিরে আসলাম স্টেশনে। সময় তখন বেলা দুইটা, অন্তত দুই ঘণ্টার মধ্যে খুলনাগামী কোনো ট্রেন নেই। খুবি গ্রুপ চাইলো স্টেশনে বসে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে, অন্যদিকে খিচুড়ি গ্রুপ চাইলো যশোর শহরে ঘুরতে। কিছুক্ষণ আলাপ-আলোচনার পর শেষমেশ তাই হলো। টাকা-পয়সার হিসাবনিকাশ মিটমাট করে খুবি গ্রুপের কাছ থেকে বিদায় খিচুড়ি গ্রুপ স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো।
Disc**ussion going on about. whether to stay or leave the station.
Photo: Toufiq Ratul
এক ইজিবাইক চালক প্রস্তাব দিলেন বিনোদিয়া ফ্যামিলি পার্কে যাওয়ার। যশোর সেনানিবাস এলাকার মধ্যে সেনা নিয়ন্ত্রিত পার্কটির পরিবেশ যশোরের অন্য পার্ক থেকে নাকি ভালো। তো ওই চালকের সাথেই দরদাম করে আমরা রওনা করলাম।
Entrance of Binodia Family Park.
Photo: Toufiq Ratul
স্টেশন থেকে পালবাড়ি মোড় হয়ে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক ধরে ইজিবাইক চললো বিনোদিয়া ফ্যামিলি পার্কের দিকে, যশোর সেনানিবাস এলাকার মধ্য দিয়ে। সেনানিবাস এলাকার শেষ প্রান্তে পার্কের অবস্থান। পার্কের কাছে আসার পর ইজিবাইক চালক সকলকে ঠিকভাবে মাস্ক পরতে বললেন, কারণ সেনাদের এলাকা তাই ওখানে বেশ কড়াকড়ি। যদিও আমরা এমনিতে মাস্ক পরেই ছিলাম।
Greenery of Binodia Family Park.
Photo: Sadman Rafid
পার্কের মূল গেটের আগে সেনানিবাস এলাকার প্রবেশমুখের গেটে দায়িত্বরত সেনাসদস্য ইজিবাইক থামালেন। কারণ ইজিবাইক চালকের মুখে মাস্ক নেই। ইজিবাইক চালক আমাদের মাস্ক পরতে বললেও নিজের মাস্ক পরতে খেয়াল নেই।
A hawk in Binodia Family Park Zoo.
Photo: Sadman Rafid
যাই হোক, ইজিবাইক চালক কাকুতিমিনতি করে হালকা হুমকি-ধমকি খেয়ে নিস্তার পেলেন। এরপর আমাদের পার্কের গেটের সামনে নামিয়ে দিলেন।
গুগল ম্যাপে আমার লেখা বিনোদিয়া ফ্যামিলি পার্কের রিভিউটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন
A monkey in Binodia Family Park Zoo.
Photo: Toufiq Ratul
সময় তখন বেলা তিনটা, বিনোদিয়া ফ্যামিলি পার্কে প্রবেশ করার জন্য জনপ্রতি ৫০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনতে হলো। টিকিটের দাম ২০ টাকা শুনে এসেছিলাম, তাই ৫০ টাকা দামটা একটু বেশিই মনে হলো। যদিও পার্কের ভিতরে যাওয়ার পর আর টিকিটের দামে নিয়ে খুতখুতানি থাকেনি। পার্কটা বেশ বড়, পুরোটা হেঁটে ঘুরতে দেড় ঘণ্টার মতো সময় লাগে। পার্কের ভিতরে আছে একটা মিনি চিড়িয়াখানা, শিশুদের জন্য মিনি ট্রেন। পার্কের পূর্ব পাশে একটা লম্বা পুকুর আছে, ওখানে প্যাডেল বোট চালানো যায়। এছাডাও আছে জাদুঘর, কটেজ, ট্রি হাউজ, মসজিদ, স্টেজ, ঝর্ণা ও শিশুদের জন্য ছোট ছোট রাইড। পুরো পার্ক জুড়ে আছে সবুজের সমারোহ।
গুগল ম্যাপে আমার লেখা বিনোদিয়া ফ্যামিলি পার্ক চিড়িয়াখানার রিভিউটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন
Khondokar Riazul Islam standing on the tree house in Binodia Family Park.
Photo: Sadman Rafid
আমরা এক ঘণ্টা পার্কে অবস্থান করি। অনেক দিন পর সারাদিন হাঁটাহাঁটি করায় ক্লান্তি ভর করে শরীরে, তাই পুরো পার্কটা ঘোরা হয়নি। তাই বিকাল চারটায় আমরা পার্ক ত্যাগ করি ও সাড়ে চারটায় স্টেশনে পৌছাই। এর আগে চারটার দিকে আসা মহানন্দা এক্সপ্রেস ট্রেনে খুবি গ্রুপ স্টেশন ছেড়ে যায়। আর আমরা স্টেশনে এসে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটি। বিকাল পাঁচটায় ট্রেন স্টেশনে পৌছায় ও আমরাও স্টেশন ত্যাগ করি।
Khichuri Group in front of Binodia Family Park gate.
Selfie: Toufiq Ratul
ট্রেনে ওঠার কিছুক্ষণ পর টিটি টিকেট চেক করতে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, আমাদের সাথে সকালবেলা আরো যারা ছিলো তারা কোথায়? আজব ব্যাপার, ঢাকা থেকে আসা ট্রেনের টিটি কিভাবে জানলেন যে আমাদের সাথে আরো লোক ছিল?
ঘটনা হলো এই যে, সকালবেলা যশোরে আসার সময় সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে ইনিই আমাদের টিকিট চেক করেছিলেন। সম্ভবত ঈশ্বরদী স্টেশনে নেমে উনি সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে খুলনা ফিরে আসছিলেন।
Flowers put beside a window of the train.
Photo: Sadman Rafid
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আমরা খুলনা রেলস্টেশনে পৌছাই। স্টেশনে নেমে একে অপরের থেকে বিদায় নিয়ে নিজ নিজ বাসায় ফিরে এলাম।
এরপর কেটে গেল ছয়টি মাস, করোনাভাইরাসের প্রকোপ প্রথমে কম থাকলেও হঠাৎ করে দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানলো দেশে। দ্বিতীয় ঢেউ যেরকম দ্রুত এসেছিল সেরকম দ্রুত চলেও গেল। এরপর আসলো তৃতীয় ঢেউ। ২০২১ এর জানুয়ারিতে যেখানে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা এক অঙ্কের ঘরে নেমেছিল, আগস্টে এখন সেটা দুুইশ ষাট এর ঘরে। সংক্রমণের হারও লাগামছাড়া। তবে আশার কথা হলো দেশে গণটিকার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। তাই যাদের টিকা নেওয়ার সুযোগ আছে তারা অবশ্যই টিকা নেবেন, আত্মীয়স্বজন-পাড়াপ্রতিবেশীদের টিকা নিতে উৎসাহিত করবেন। ইনশাআল্লাহ শীঘ্রই পৃথিবী এই মহামারী থেকে মুক্তি পাবে, তখন আমরা আবারও গদখালীতে ফুলের রাজ্যে যাবো, কারণ আগেরবার মনমতো ফুল দেখতে পারিনি যে…
নদীপথে খুলনা থেকে সুন্দরবনের করমজল ভ্রমণ সম্পর্কে আমার বিস্তারিত লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
ধন্যবাদ সবাইকে লম্বা পোস্টটি পড়ার জন্য।