Caption: কভার ফটোতে সাতছড়ি উদ্যানের মুল ফটক এবং আমি।
আমার মুল দাওয়াত ছিলো মুলত হবিগঞ্জ এক বন্ধুর বাসায় কিন্তু সাতছড়ি উদ্যানের এত কাছে এসে তা না ঘুরে ফিরে যাবো ভ্রমন পিপাসু মন তা স্বায় দেয়নি তাই বন্ধুদের নিয়ে চলে গেলা উদ্যান ঘুরতে। আমরা রওনা হই মুলত হবিগঞ্জ বানিয়াচং গ্রাম থেকে সাতছড়ি উদ্যানের উদ্দ্যেশ্য। তাই এবার চেষ্টা করবো সাতছড়ি উদ্যান নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু বর্ননা করতে।
Caption: মুল ফটক পার হয়ে প্রবেশের পরই কিছু তথ্য সম্বলিত সাইনবোর্ড চোখে পরবে।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক উদ্যান।
সাতছড়ি উদ্যান হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত । রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে এর দূরত্ব প্রায়১৩০ কিলোমিটার। উদ্যানের কাছাকাছি ৯টি চা বাগান আছে যা আশেপাশে র পরিবেশ কে করে তুলেছে আরোও মনোরম । উদ্যানের ঠিক পশ্চিম দিকে সাতছড়ি চা বাগান এবং তার ঠিক পূর্ব দিকেই চাকলাপুঞ্জি চা বাগান দেখতে পাবেন। উদ্যানের অভ্যন্তরভাগে টিপরা পাড়ায় একটি পাহাড়ী উপজাতির প্রায় ২৪টি পরিবার বসবাস করে। এই ক্রান্তীয় ও মিশ্র চিরহরিৎ পাহাড়ী বনভূমি ভারতীয় উপমহাদেশ এবং উন্দো-চীন অঞ্চলের সংযোগস্থলে অবস্থিত।
উদ্ভিদবৈচিত্র্য এর মধ্যে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রয়েছে প্রায় ২০০’রও বেশি গাছপালা। এর মধ্যে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, পাম, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, ডুমুর, জাম, জামরুল, সিধাজারুল, আওয়াল, মালেকাস, ইউক্যালিপটাস,আকাশমনি, বাঁশ, বেত-গাছ ইত্যাদির বিশেষ নাম করা যায়।
জীববৈচিত্র্য ভরপুর এ উদ্যানে রয়েছে ১৯৭ প্রজাতির জীব-জন্তু । এর মধ্যে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরিসৃপ, ৬ প্রজাতির উভচর। আরো আছে প্রায় ১৫০-২০০প্রজাতির পাখি। এটি বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং পাখিদের একটি অভয়াশ্রম। বনে লজ্জাবতী বানর, উল্লুক (Gibbon), চশমা পরা হনুমান (Langur), কুলু বানর (Macaque), মেছো বাঘ, মায়া হরিণ (Barking Deer) ইত্যাদি; সরিসৃপের মধ্যে সাপ; পাখির মধ্যে কাও ধনেশ, বনমোরগ, লালমাথা ট্রগন, কাঠঠোকরার, ময়না, ভিমরাজ, শ্যামা, ঝুটিপাঙ্গা, শালিক, হলুদ পাখি, টিয়া প্রভৃতির আবাস রয়েছে। এছাড়া গাছে গাছে আশ্রয় নিয়েছে অগণিত পোকামাকড়, ঝিঁঝিঁ পোকা তাদের অন্যতম।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভিতর সাতটি ছড়া বা ঝর্না আছে যেখান থেকে মুলত এই উদ্যানের নামকরণ করা হয়েছে সাতছড়ি। পর্যটকদের দৃষ্টি নন্দন স্থানের মধ্যে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান একটি। দেশের ১০ টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে এটি অন্যতম। এর আয়তন ২৪২.৮২ হেক্টর বা ছয়শ’ একর। এটি রঘুনন্দন হিল রিজার্ভ ফরেস্টের একটি অংশ। ঢাকা থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার উত্তর-পুর্ব দিকে এবং শ্রীমঙ্গল থেকে ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান একটি ট্রপিকেল রেইন ফরেস্ট বা মিশ্র চির সুবুজ এবং পাতাঝরা বন। ইকো ট্যুর গাইডের সাহায্য নিয়ে জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর সাতছড়ি উদ্যানে হাইকিং করলে অপূর্ব বনশ্রী হৃদয়ে দাগ কাটবে নিঃসন্দেহে। যা নিজের চোখে এবং বাস্তবে উপভোগ না করলে বোঝা সম্ভব নয়। হাজারো পর্যটক প্রাকৃতিক দৃশ্য পরিভ্রমণে আসেন।
এটির মধ্য দিয়ে পানিহীন ৭টি ছোট খাল বা ছড়া প্রবাহিত হয়েছে। যা বর্ষায় পানি এলেও তা শুকিয়ে যায়। তবে অবাক হওয়ার কথা, ছড়াগুলোর মধ্যে প্রকৃতি তার নিয়মে বিছিয়ে রেখেছে পানি বিহীন দুধের ন্যায় সাদা বালু। দুধ রং বালুর ওপর হেঁটে যেতে পারো উদ্যানের অভ্যন্তরে। তখন মনে হবে এ যেন প্রকৃতির সাদা গালিচার অভ্যর্থনা। ছড়ার পথে হাঁটতে হাঁটতে চারদিকে চোখ রাখলে দেখতে পাবেন বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজি ও নাম না জানা অসংখ্য লতাপাতা। উল্লেখযোগ্য বৃক্ষের মধ্যে চাপালিশ, আউয়াল, কাঁকড়া, হারগাজা, হরতকি, পাম, লটকন, আমড়া, গামার, কাউ, ডুমর ইত্যাদি। এ বৃক্ষগুলোর ফল খেয়ে বনে বসবাসকারী প্রাণীরা বেঁচে থাকে। বনে বসবাসকারী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে উল্লুক, বানর, চশমা বানর, হনুমান ইত্যাদি। পাখিদের মধ্যে শ্যামা, ময়না, বসন্ত বাউরী, ফোটা কণ্ঠী সাতবাইলাসহ অচেনা অনেক পাখিরা তাদের সুমধুর ধ্বনিতে মুখরিত করে।
Caption: সাতছড়ি উদ্যানে যেতে আপনাকে ঠিক দুই ধারে সবুজ মাঝখানে রাস্তা দিয়েই যেতে হবে।
Caption : উদ্যানের সাত ছড়ার একটি ছড়া।
Caption: উদ্যানে প্রবেশের পর একটি অংশে যাওয়ার জন্য সিড়ি।
Caption: ওয়াচ টাওয়ারের উপর থেকে তোলা একটি ছবি।
থাকা ও রাত্রিযাপনের স্থান
সাতছড়ি বনে বনবিভাগের একটি বিশ্রামাগার আছে। বনবিভাগের অনুমতি নিতে পারলে সেখানে থাকা সম্ভব। নইলে রাতে থাকতে হবে হবিগঞ্জ, মাধবপুর বা শায়েস্তাগঞ্জ শহরে। থাকার জন্য বেছে নিতে পারেনঃ
সার্কিট হাউজ, হবিগঞ্জ, ০৮৩১-৫২২২৪।
জেলা পরিষদ রেস্টহাউজ, হবিগঞ্জ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড রেস্টহাউজ, হবিগঞ্জ। সিংগেল কক্ষ ভাড়া: ১২০/- ও ডাবল কক্ষ ভাড়া: ২০০/-।
শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে রেস্টহাউজ - বাংলাদেশ রেলওয়ে’এর ব্যবস্থাধীন (সরকারী)। মোবাইল: +৮৮০১৯২০-৪১৬৬২৩।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ রেস্টহাউজ - (সরকারী)।
পল্লী বিদ্যুৎ রেস্টহাউজ, শায়েস্তাগঞ্জ - পল্লী বিদ্যুৎ’এর ব্যবস্থাধীন (সরকারী)।
হোটেল সোনার তরী, হবিগঞ্জ। সিংগেল কক্ষ ভাড়া: ৩০০/- ও ডাবল কক্ষ ভাড়া: ৩৫০/- এবং এসি কক্ষ ভাড়া: ৭০০/-।
আল-আমিন হোটেল, মাধবপুর।
হোটেল নুরজাহান, মাধবপুর।
হাইওয়ে ইন লিঃ, মাধবপুর।
Caption : উদ্যানের প্রতিটি গাছের পাতাই বলে দেয় এ উদ্যানের সৌন্দর্য্য।
Caption: ওয়াচ টাওয়ার।
Caption: উদ্যানের ভিতরে কাঠাল গাছ।
caption : চা বাগান।
খাওয়া দাওয়া
চুনারুঘাটের স্থানীয় পর্যায়ের বিশেষ কোনো বিখ্যাত খাদ্য নেই, কেবল আথনী পোলাও ও সাতকরা (হাতকরা) ব্যতীত। তবে স্থানীয় আনারস, কমলা, পান, লেবু এবং কাঠালের বেশ সুখ্যাতি রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে চা-পাতা। এই এলাকায় প্রচুর মাছ পাওয়া যায় এবং খামার ভিত্তিক হাঁস পালন করা হয়। এখানে সাধারণভাবে দৈনন্দিন খাওয়া-দাওয়ার জন্য স্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। উন্নতমানের হোটেলের জন্য আসতে হবে মাধবপুরে; এখানে রয়েছেঃ
আল-আমিন হোটেল;
হোটেল নুরজাহান;
হাইওয়ে ইন লিঃ;
পানশী।
সাতছড়ি উদ্যান মুলত জাতীয় আমাদের উদ্যান তাই এখানে ভ্রমনের সময় পরিবেশ এর ভারসাম্য র ক্ষতি হয় এমন কিছু না করি। অপচনশীল বর্জ্য পলিথিন যত্রতত্র না ফেলে আসি। এবং হৈ হুল্লোর করে পশু পাখীর সমস্যা না করি।
Googlmaps link–সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
https://maps.app.goo.gl/vApAFPC7nDLWP67v8
#BDLG #BangladeshLocalguide #Travel #Localguideconnect #Letsguide