প্রিয় লোকাল গাইডস,
বন্ধুরা আশা করি আপনারা সকলেই ভাল আছেন।
আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব কুয়াকাটা ভ্রমণের কিছু তথ্য যেটার মাধ্যমে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন বলে আমি আশা করি।
ক্যাপশন: সূর্য অস্ত সময় এর ফটো
বাংলাদেশের দুইটি সমুদ্রসৈকত রয়েছে একটি কক্সবাজার আরেকটি হলো কুয়াকাটা। বর্তমানে ভ্রমণ প্রেমীদের কাছে কুয়াকাটা অন্যতম তার একটি বিশেষ কারণ হলো পদ্মা সেতু এবং পায়রা সেতু হওয়াতে কুয়াকাটা যাতায়াতব্যবস্থা এখন খুব সহজ হয়েছে। কুয়াকাটাতে অনেকের যাওয়ার ইচ্ছে থাকে এবং অনেকে যেতে চান তাদের জন্য আমি একটি ভ্রমণ গাইড নিয়ে এসেছি এটার মাধ্যমে আমি কুয়াকাটা ভ্রমণের যাবতীয় বিষয়বস্তু গুলো তুলে ধরব যাতে করে আপনারা কুয়াকাটা যাবার পূর্বে এই পোস্টটা পড়ে খুব সুন্দর ভাবে আপনাদের ট্যুর প্ল্যান করতে পারেন।
কুয়াকাটাতে আমি বিগত দিনে একাধিকবার ওখানে ভ্রমণ করেছি এবং আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা থেকেই আপনাদের সাথে কিছু তথ্য শেয়ার করব। আরো মজার বিষয় হলো আমি যখন একাদশ শ্রেণীতে পড়তাম তখন আমার ইংরেজি ফাস্ট পেপার বইয়ে একটি প্যাসেজ ছিল কুয়াকাটা নিয়ে।
আর একটা বিষয় তো না বললেই নয়, বাংলাদেশ লোকাল গাইডস এর অন্যতম প্রবীণ সদস্য @engrNasir ভাইকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই যে তিনি উন্মুক্তঘোষণার মাধ্যমে সকলকে কানেক্টে পোস্ট করার একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান করেছেন। আর এই আহ্বানের অন্যতম কারণ হচ্ছে যারা 200 তম মেগা মিটআপে উপস্থিত হতে পারেনি তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব করার জন্য। তাই আমি স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই প্রতিযোগিতায় অংশ করতেছি।
কুয়াকাটা ( Kuakata Sea Beach ) বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে অবস্থিত এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি
সমুদ্র সৈকত ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র। এটি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। এই বৈশিষ্ট একে অন্য সব সৈকত থেকে আলাদা করেছে। এর দৈর্ঘ প্রায় ১৮ কিলােমিটার। অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য পর্যটকরা একে বলে সাগর কন্যা।
মাত্র দুদিনের ভ্রমণেই ঘুরে আসতে পারেন কুয়াকাটার অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও প্রাচীন স্থাপত্য।
আমি এই পোষ্টের মাধ্যমে কুয়াকাটা ভ্রমণের যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
কুয়াকাটা যাবার উপায় :
কুয়াকাটা সড়ক পথে, নদী পথে বা আকাশ পথে যাওয়া যায় ।
সড়ক পথে:
ঢাকার গাবতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে
- সাকুরা পরিবহন
- সুরভী পরিবহন
- ঈগল পরিবহন
ঢাকার সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে
- সাকুরা পরিবহন
- হানিফ পরিবহন
- শ্যামলী পরিবহন
- গ্রীন লাইন পরিবহন
- কুয়াকাটা পরিবহন
- বেপারী পরিবহন
- ঈগল পরিবহন
গুলিস্তান থেকে বিআরটিসি বাস ছেড়ে আসে বরিশাল ও কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে।
উপরে উল্লেখিত পরিবহনগুলোর ব্যতীত আরো অনেক পরিবহন রয়েছে যারা ঢাকা বরিশাল কুয়াকাটা রুটে সার্ভিস দিয়ে আসছে আপনি ওগুলো যেকোনো একটাই চলে আসতে পারেন।
এসব বাসে জনপ্রতি ভাড়া 700 থেকে 800 টাকা ।
A/C বাসের ভাড়া 1000 থেকে 1200 টাকা।
বাসগুলাে আপনাকে একদম বীচের কাছেই নামিয়ে দিবে হেঁটেই বীচে চলে যেতে পারবেন।
নদী পথে**:**
প্রতিদিন ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে দক্ষিণঅঞ্চলের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশ্যে বেশ কিছু লঞ্চ ছেড়ে যায়। লঞ্চ গুলাে বিকাল ৫ টা থেকে রাত ৯ টার মধ্যে যাত্রা শুরু করে। কেভিন ভাড়া ১০০০ থেকে 7500 টাকা পর্যন্ত আর ডেকে ভাড়া ২৫০ থেকে 550 টাকা পর্যন্ত। যেকোনাে একটায় চেপে চলে আসতে পারেন
পটুয়াখালী লঞ্চ ঘাট এবং আমতলী লঞ্চ ঘাট । পরে সেখান থেকে বাস , মোটরসাইকেলে চলে যাবেন কুয়াকাটা। পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটার দুরুত্ব প্রায় কিলােমিটার । বাস বাড়া 200-250 টাকা।
যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন তারা চাইলে এই যে কোন লঞ্চে চড়ে বরিশাল, পটুয়াখালী অথবা আমতলী যেয়ে নেমে তারপর কুয়াকাটা অনায়াসে চলে যেতে পারবেন
আকাশ পথে:
ঢাকা হজরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে
বরিশাল এয়ারপোর্ট পর্যন্ত প্লেনে এসে তারপর সেখান থেকে সড়ক পথে নথুল্লাহবাদ অথবা রূপাতলি আসতে হবে অখান থেকে যেকোনো একটা বাসে চড়ে আপনাকে কুয়াকাটা আসতে হবে।
যারা খুব দ্রুত কুয়াকাটা আসতে চান তাদের জন্য আকাশপথ টাই ভালো কিন্তু একটু এক্সপেন্সিভ বটে।
বরিশাল থেকে কুয়াকাটার দুরুত্ব প্রায় 113 কিলােমিটার আর ঢাকা থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব প্রায় 296 কিলোমিটার তাই সবকিছু বিবেচনা করে ঢাকা থেকে এসি বাসে গেলেই ভাল হয়। আর ঘুরাঘুরির জন্য সময় একটু বেশি পাওয়া যায় । কারণ বাসগুলাে সন্ধ্যা সাত টার পর কুয়াকাটা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে ।
কুয়াকাটা ট্যুর প্ল্যান:
কুয়াকাটা ঘুরার জন্য তিন রাত দুই দিন যথেষ্ট, ঢাকা থেকে কুয়াকাটা আসতে এক রাত এবং কুয়াকাটা থেকে ঢাকা যেতে এক রাত ।
একটু কঠিন হলেও দুই দিন পর দেখার মত আর কিছু থাকেনা। তবে আপনি চাইলে একরাত বেশি থাকতে পারেন। রাতের লঞ্চ বা বাসে রওনা দিলে সকালেই চলে আসবেন কুয়াকাটা।
প্রথম দিন :
সকালে এসেই হােটেলে চেকইন করে একটু রেস্ট নিয়ে চলে যাবেন সমুদ্রে। দুপুর পর্যন্ত বীচে কাটিয়ে চলে আসবেন হােটেলে। ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে মোটরসাইকেল ভাড়া করে চলে যাবেন পশ্চিম দিকে। মােটর সাইকেল ড্রাইভারকে বলবেন আপনি তিন নদীর মােহনা পর্যন্ত যাবেন ঝিনুক বীচ,
, ফেরার পথে ঝাউ বনে, লেবুবনে কিছু সময় কাটিয়ে সূর্যাস্ত দেখে ফিরবেন । মােটর সাইকেলে ভাড়া নিবে ৬০০-৮০০ টাকা । আর অটোতে ১০০০-১২০০ টাকা।
এর পর চলে যাবেন ফাতরার চার । জায়গাটা দারুন । অপর পারে আছে সুন্দর বনের কিছু অংশ , যাকে লােকজন বলে ফাতরার বন । তবে এখান থেকে বনে যাওয়া যায়না । যেতে হলে কুয়াকাটা বীচ থেকে ট্রলারে যেতে হয় । কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে চলে যাবেন পাশের ঝাউ বনে দারুন সুন্দর ভিউ পাওয়া যায় এই জায়গা, চাইলে কিছু ছবি তুলে রাখতে পারেন স্মৃতি হিসেবে। এর পর চলে যাবেন তিন নদীর মােহনায় । এখানে তিন নদী এসে মিশেছে এখানকার ভিউ দারুন । কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে ফেরার পথে থামবেন লেবুবনে লেবু গাছ না থাকলেও জায়গাটা অসাধারণ । পাশেই বিভিন্ন রকমের সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়, বললেই তারা ফ্রাই করে দিবে । মাছের ফ্রাই খেতে খেতে সূর্যাস্ত দেখেতে অন্নরকম লাগবে । সূর্যাস্ত দেখে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট অথবা বিচে ফিরে আসবেন আপনি চাইলে এখানে মাগরিবের নামাজ আদায় করতে পারেন বিচের পাশে একটি মসজিদ রয়েছে।
সন্ধ্যার পরে কিছুক্ষণ সময় বিচে কাটিয়ে চলে যাবেন শপিং করতে এখানে বিভিন্ন ধরনের দেশি বিদেশি চকলেট পাওয়া এগুলো খুবই জনপ্রিয় এবং ঝিনুকের তৈরি অনেক ধরনের প্রোডাক্ট পাওয়া যায় যেগুলো কুয়াকাটার স্মৃতি হিসেবে নিয়ে যেতে পারেন এবং কাউকে উপহার দেওয়ার জন্য ক্রয় করতে পারেন।
কুয়াকাটার এই মার্কেটে বিভিন্ন ধরনের শুটকি পাওয়া যায়।
ক্যাপশন: একটি টেবিলের উপরে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ রাখা
শপিং শেষ করে চলে আসবেন আবার বিচে এখানে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ পাওয়া যায়, রাতের খাবারটা এখান থেকে সেরা নিবেন অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন। রাতের খাবার খেয়ে খুব দ্রুত রুমে যেয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন কারণ পরের দিন সকালে আবার সূর্য উদয় দেখতে যেতে হবে।
ক্যাপশন: পাঁচটি ফটোর একটি Collage যার মধ্যে তিনটি রয়েছে এই ঝিনুকের বিভিন্ন ধরনের পণ্য সামগ্রী এবং বাকি দুটি বিভিন্ন ধরনের শুটকি
তবে কাল সূর্যোদয় দেখতে যেতে হলে রাতেই যানবাহন ঠিক করে রাখবেন তাহলে আপনার জন্য সুবিধা হবে এবং সময় মত তারা চলে আসবে। সূর্য উঠার ৩০ মিনিট আগে রওনা দিতে পারেন অথবা ফযরের নামাজ আদায় করেও রওনা দিতে পারেন।
ক্যাপশন: সূর্য উদয়ের একটি ফোট
দ্বিতীয় দিন : ভাের এর দিকে হােটেল থেকে রওনা দিবেন । গঙ্গামতির চর থেকে সূর্যোদয় দেখে ফেরার পথে লাল কাকড়ার চর, বৌদ্ধ মন্দির, ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী নৌকা , কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান, কুয়াকাটার কুয়া দেখে নিবেন । তবে সূর্যোদয় গঙ্গামতির চর থেকে কাউয়ার চর এ ভালাে দেখা যায় ।
ক্যাপশন: উত্তাল সমুদ্র উপভোগ করছে কিছু মানুষ
উপরে উল্লেখিত দর্শনীয় স্থানগুলো দেখা হয়ে গেলে জিরো পয়েন্টে এসে নাস্তা সেরে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে তারপর আবার বেলা চলে আসবেন বিচে। সমুদ্রে কিছুক্ষণ ঝাপাঝাপি করবেন এবং এখানে অনেক ক্যামেরাম্যান পাওয়া যায় যারা আপনার খুব সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে দিবে। প্রতি পিছ ছবির জন্য নিবে 5 টাকা করে অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন।
সমুদ্রে গোসল শেষে রুমে ফিরে এসে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিবেন এবং আপনারা যদি চান বরিশাল সহর এই ট্রিপে একটু ঘুরে দেখবেন তাহলে দুপুরের খাবার খেয়ে আপনারা বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন এবং বরিশাল শহর ঘুরে আপনারা খুব সহজেই ঢাকা চলে যেতে পারবেন।
আর আপনারা যদি ডাইরেক্ট কুয়াকাটা থেকে ঢাকা আসতে চান তাহলে বিকাল পর্যন্ত বিচের আশেপাশে ঘোরাফেরা করবেন, সন্ধ্যার পরে কুয়াকাটা থেকে বাস ছেড়ে থাকে যেগুলোতে খুব সহজেই আপনি ঢাকা পৌঁছাতে পারবেন রাতের মধ্যে।
কুয়াকাটা থেকে দুপুর দুইটা তিনটার মধ্যে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে সন্ধ্যার মধ্যেই বরিশাল শহরে পৌঁছাতে পারবেন এবং বরিশাল থেকে লঞ্চ ছাড়ার সময় রাত 9:00 আর এই সময়ের ভিতর আগেই আপনি বরিশাল শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারবেন।
বরিশাল শহর ভ্রমণ সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।
সময় নিয়ে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। কুয়াকাটা ভ্রমণ বিষয়ে যদি আরো কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে নির্ধিদায় নিচে কমেন্ট বক্সে জিজ্ঞেস করুন।
#bdlgwritingcontest #bdlg200 #200meetup