১৪ই জুন,বিশ্ব রক্তদাতা দিবস।
১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পালন এবং ২০০০ সালে "নিরাপদ রক্ত"এই থিম নিয়ে পালিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৪ সালে প্রথম পালিত হয়েছিল বিশ্ব রক্তদান দিবস।২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশনের পর থেকে প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই বিষয়ে তাগিদ দিয়ে আসছে।এ দিনটির আরো একটি তাৎপর্য আছে।১৮৬৮ সালের এ দিনে জন্ম হয় নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনারের যিনি আবিষ্কার করেছিলেন ABO ব্লাড গ্রুপ সিস্টেম।
…
স্বেচ্ছায় রক্তদানের পূর্বে জেনে নিন কারা রক্তদানে সক্ষম:
১.গত চার মাসের মধ্যে রক্ত দেননি এমন যে কোন সুস্থ ব্যক্তি
২.বয়স:১৮-৫৭ বছর।ওজন:কমপক্ষে ৪৫ (মহিলা),৪৭ (পুরুষ) কেজি।
৩.ছয় মাসের মধ্যে ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড,চর্ম ও যৌন রোগ মুক্ত এবং বড় যে কোন ধরনের অপারেশান হয়নি এমন ব্যক্তি।
৪.মহিলাদের মধ্যে গর্ভাবস্থায়য়,মাসিক চলাকালীন কিংবা দুগ্ধ দানকালীন সময়ে রক্ত দিতে পারবেন না।
৫.এক সপ্তাহের মধ্যে এন্টিবায়োটিক কিংবা এস্পিরিন জাতীয় ওষুধ সেবনকারী এবং এক মাসের মধ্যে টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তি রক্ত দিতে পারবেন না।
৬.ডায়াবেটিস,এজমা,কিডনী রোগ,ক্যান্সার,অস্বাভাবিক রক্তচাপ,রক্ত আমাশয়, পাইলস,রক্তজনিত কোন রোগ,মৃগী রোগ বা অন্যান্য মানসিক সমস্যার রোগী রক্ত দিতে পারবেন না।
৭.কোন প্রকার নেশাজাতীয় ঔষধ সেবন,একাধিক অরক্ষিত যৌন মিলন কিংবা অপরীক্ষিত রক্ত বা রক্তের উপাদান গ্রহণকারী ব্যক্তি রক্ত দিতে পারবেন না।
…
আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রক্তের চাহিদা বেশি কিন্তু এসব উন্নয়নশীল দেশেই স্বেচ্ছায় রক্ত দানকারীর সংখ্যা কম।আমাদের বেশির ভাগের মনে রক্ত দানের ক্ষেত্রে “ভয়” বাধা হিসেবে কাজ করে।৫২-৬৯-৭১ এ রক্ত ঝরানো জাতির কাছে “মোটা সুঁই” এর এ অযৌক্তিক ভয় মোটেও কাম্য নয়।প্রত্যেক সুস্থ ব্যক্তির উচিত স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসা।কারণ বিশ্বের নানা দেশ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে জানা যায়, ‘নিরাপদ রক্ত সরবরাহের’ মূল ভিত্তি হলো স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে দান করা রক্ত। কারণ তাদের রক্ত তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং এসব রক্তের মধ্য দিয়ে গ্রহীতার মধ্যে জীবনসংশয়ী সংক্রমণ, যেমন এইচআইভি ও হেপাটাইটিস সংক্রমণের আশঙ্কা খুবই কম।
সুতরাং আসুন,আমরা প্রত্যেকে হয়ে উঠি একেকজন রক্তযোদ্ধা এবং অন্যদের ও উৎসাহিত করি স্বেচ্ছায় রক্তদানে।
…
এবার আশি গুরুত্বপূর্ন পয়েন্ট গুলোতে যে রক্তদিলে কি লাভঃ
★কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিরা কি রক্ত দান করতে পারবে?
যখন কোনো ব্যক্তি কোভিড-১৯ থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন, তখন তার রক্তের প্লাজমাতে প্রোটিন অ্যান্টিবডি তৈরি হয় যা নতুন করোনভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে। যারা করোনা পুরোপুরি নিরাময় পেয়েছেন এবং সুস্থ হওয়ার কমপক্ষে দুই সপ্তাহ পরও যাদের মধ্যে নতুন করে করোনা সংক্রমণের লক্ষণ নেই, তাদেরকে রক্তের তরল অংশ বা প্লাজমা দানে উৎসাহিত করা হয়। তবে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে প্লাজমা থেরাপি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে।
হার্ট অ্যাটাক এবং লিভারের বিভিন্ন অসুখের ঝুঁকি হ্রাস করে: আয়রন ওভারলোডকে হৃৎপিণ্ড, লিভার, অন্ত:স্রাব গ্রন্থি এবং সারা শরীরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন অঙ্গে অতিরিক্ত আয়রন জমে থাকার বিষয় হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। ২০১৩ সালের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, শরীরে আয়রনের পরিমাণ বেশি হলে হৃদরোগ এবং লিভারের অসুস্থতার ঝুঁকি বেশি থাকে। নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে আপনি নিজের শরীরের অতিরিক্ত আয়রন প্রতিরোধ করতে পারেন। এর মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে আপনার হৃদরোগ এবং লিভারের অসুস্থতার ঝুঁকি হ্রাস পাবে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ হলো ক্যান্সার। রক্তদান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে। যদি আপনি আপনার শরীরের আয়রনের স্তরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন তবে লিভার ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার এবং অন্ত্রের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমতে পারে।
নতুন রক্তকণিকা তৈরি: রক্তদানের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আপনার শরীরে নতুন রক্তকণিকা তৈরি হবে। নতুন রক্তকণিকা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করতে পারে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত রক্তদান করলে কোলেস্টেরল, লিপিড এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হ্রাস পায়। এছাড়া রক্তকণিকাগুলো আয়রন দিয়ে তৈরি হয়, যা অতিরিক্ত হলে রক্তনালীগুলোর কাজ বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নিয়মিত রক্তদান করার মাধ্যমে আপনি অতিরিক্ত আয়রন প্রতিরোধ করতে এবং কোলেস্টেরল বজায় রাখতে পারেন।
অকালবার্ধক্যের ঝুঁকি কমায়: রক্তদানের মাধ্যমে মানুষকে সাহায্য করা আপনাকে স্বর্গীয় মানসিক শান্তি এবং তৃপ্তি প্রদান করবে। এটি আপনাকে মানসিক চাপ মুক্ত করতে সহায়তা করবে, যা অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়া রক্ত দেয়ার পর শরীরে নতুন রক্তকণিকা তৈরি হয় যা অকালে ত্বক কুঁচকে যাওয়া কমায়।
★বিশ্ব কেন আরও স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতার প্রয়োজন?
সারা বিশ্বে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ১৩ লাখ মানুষ মারা যায় এবং ২-৫ কোটি মানুষ আহত হন বা অক্ষম হয়ে পড়েন। এই হতাহতের প্রায় ৯০ শতাংশ ঘটে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে। আর অনিয়ন্ত্রিত রক্তক্ষরণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৪ লাখ ৬৮ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
এছাড়া বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এসব শিশুর নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হয়। এখন পর্যন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞান রক্ত উৎপদদন করতে সক্ষম হয়নি। তাই রক্ত পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো দান করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের কাছ থেকে এটি সংগ্রহ করা। দান করা রক্ত ভবিষ্যত প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ব্লাড ব্যাঙ্কে সংরক্ষণ করা হয়।
রক্তদান জীবন বাঁচাতে পারে। আপনি যখনই রক্তদান করছেন, তখন আপনি অন্তত তিন জনের জীবন বাঁচাতে অবদান রাখছেন।
বাংলাদেশে কোথাই কোথাই সেচ্ছায় ব্লাড ডোনার খুজে পাবো?
অনেক গুলো গ্রুপ রয়েছে এর মধ্যে পুরো বাংলাদেশে কাজ করে এমন ২টি গ্রুপের লিংক দিচ্ছি।
এই ২টা গ্রুপ সহ অসংখ্য সেচ্ছাসেবি রক্তদান গ্রুপ ফেইসবুকে খুজে পাওয়া যাবে।
রক্তদানের কি কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে?
সুস্বাস্থের অধিকারী প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য রক্তদানের ক্ষেত্রে কোনো ক্ষতি নেই। প্রত্যেক রক্তদাতার জন্য নতুন/জীবাণুমুক্ত সরঞ্জাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। সুতরাং রক্তদানের ক্ষেত্রে দাতার কোনো ঝুঁকি নেই।
যদিও রক্তদানের পর আপনার বমিভাব বা মাথা ঘোরা অনুভব হতে পারে। তবে এ লক্ষণগুলো সাধারণত কয়েক মিনিটের জন্য স্থায়ী হয়। এটি হলে আপনি সুস্থ বোধ না করা পর্যন্ত পা সোজা করে শুয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে পারেন।
লেখাগুলো আমাকে বলেছেন ডাঃ ফাতেমা সিদ্দিকি (আমার বড় আপু)
সবাইকে রক্তদাতা দিবসের শুভেচ্ছা
ধন্যবাদ সবাইকে…
** @ShafiulB @ShahMdSultan @Farhan21 @Mohammadalauddin @ShahriarAkib1 @MS_Pathan আপনারা কখনো রক্তদান করে থাকলে অনুবতি জানতে চাই।**