ছোটবেলা যে কয়টা গল্প শুনে অবাক হয়েছিলাম তার মধ্যে অন্যতম ছিলো দাদা নানাদের ঢাকা থেকে হেটে বাড়ি ফেরা।
আর এখন তো ডা. বাবর আলী হেটেই ৬৪ জেলা শেষ করে ফেলেছেন গত বছর। যদিও অনাধুনিক সেই আমলে কারো সহযোগিতা ছাড়াই সেইসব পথ পাড়ি দেওয়ার গল্প সত্যিই রোমাঞ্চকর।
সাইকেলে ৬৪ জেলা শেষ করা মানুষের নাম তো লিষ্ট করে শেষ করা যাবেনা। তার উপর খারদুংলা পাস জয় করা মানুষের সংখ্যা ও নেহাৎ কম নয় আমাদের দেশে।
সেই ছোটবেলায় ক্লাস থ্রি তে থাকতে আমার চেয়ে ৩ গুন ওজনের সাইকেলের ভিতর দিয়ে পা ঢুকিয়ে নিজে নিজে সাইকেল জীবনের যাত্রা শুরু করি। তারপর ক্লাস সেভেনে আব্বু আর মামা আমাকে সাইকেল কিনে দেয়। তখনি আমার নিজের সাইকেল হয়। অনাধুনিক জীবনের সেইসব স্মৃতি এখনকার ক্যামেরা বন্দী সময়ের চেয়েও বেশি উজ্জল।
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে রেগুলার সাইক্লিং করি, আর মাঝেমধ্যে সুযোগ পেলেই ৫০ কিলো ৮০ কিলো। কিন্তু সোনারগাঁও থেকে চৌদ্দগ্রাম যাওয়ার জন্য একা একাই চিন্তা করতে হলো।বলা যায় অনেক দিনের একটা শখ।
প্ল্যান মতো ২৫/০২/২০২০ ফজরের আযানের পর রওনা দেই। ভবেরচর গিয়ে একটা হোটেলে নামাজ সেরে নিয়ে রওনা দেই আবার। ভোরে ঠান্ডা থাকলেও রোদ উঠার সাথে ঠান্ডা কমতে শুরু করেছে। ক্যান্টনমেন্ট গিয়ে দেখা হবে Ishtiaq ভাইয়ের সাথে। কনফার্ম করেই সামনে এগুতে থাকলাম।
দাউদকান্দি ব্রীজ পার হয়ে গৌরিপুর ও পার হয়ে গেলাম, ভাবলাম আরো কিছু যাই তারপর ব্রেক নেওয়া যাবে। রোদ বাড়ার আগে যতদুর যাওয়া যায় ততোই ভালো।
এরপর ইলিয়টগঞ্জ, মাধাইয়া পার হয়ে গেলাম কিন্তু আরেকটু সামনে যাই যাই করে ব্রেক নেওয়া হচ্ছেনা।
চান্দিনা ও চলে আসলো। চান্দিনা বাজারের পরেই + এর আদলে সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো সুপারি বাগানটা দেখে একটু দাড়ালাম। বাসে করে যতোবারই এই পথে আসছি গেছি এই বাগানটা খুব মন ভরে দেখতাম। কিন্তু কখনো নামার সুযোগ হয়নি। তাই এই সুযোগে একটু দেখে নিলাম।
আবার রওনা দিয়ে অল্প কিছু সামনে গিয়ে একটা চা দোকানে ব্রেক দিলাম। পানি আর চা বিস্কিট খেয়ে একটুখানি রেস্ট নিয়ে রওনা দিলাম। সকাল 8:30 এর পরেই ক্যান্টনমেন্ট পৌঁছে গেলাম। তারপর দেখা হল ইশতিয়াক ভাই এবং ওনার সাথে আসা আরো দুজনের সাথে। তারপর শুরু হল কোটবাড়ি আর ক্যান্টনমেন্ট এর বিশেষ জায়গাগুলো ঘুরা।
ক্যান্টনমেন্ট এর ফায়ারিং রেঞ্জ এর নিষিদ্ধ এলাকার পাশ দিয়ে একটা অদ্ভুত সুন্দর অফ ট্রেইল রোড দিয়ে সামনে এগিয়ে মোটামুটি আপহিল, ডাউনহিল শেষ করলাম। তারপর কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি ঘুরে চা পানের বিরতি। বন বিভাগের একটা বাগানের পুকুর পাড়ে বসে বেশ কিছুক্ষণ রেষ্ট নিলাম সাথে গল্প হলো বেশ।
এরপর ম্যাজিক প্যারাডাইস, ডিনো পার্ক, লালমাই পাহাড় হয়ে সুয়াগাজী বাজার অব্দি এগিয়ে দিয়ে ওরা ব্যাক করে শহরে।
বাকিটা পথ আমি ব্রেক না নিয়ে আমানগন্ডা নামক জায়গায় এসে যোহর এর নামাজ আদায় করি। পরে ৩০ মিনিটের মাঝে চৌদ্দগ্রাম পৌঁছে গেলাম।
আর আমার শখের রাইড টা পূরণ হলো। মোট চালিয়েছিলাম ১১৭ কিলোমিটার।
আসার সময় সোজা চলে এসেছিলাম ৪ দিন পর। বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো আসার পথে। তবুও ভালো ভাবেই শেষ করতে পেরেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ।
সাথে যা যা নিয়েছিলামঃ
১. হেলমেট
২. সানগ্লাস
৩. পানি
৪. উইন্ডব্রেকার স্যুট
৫. সেফটি লাইট ও হর্ণ
#No_Helmet_No_Ride
#More_Cycling_Save_World